একটা ক্ষীণ আলো ঠিক চোখের উপরে এসে পড়েছে। বড়লোকের বাসায় এই আলো কার্নিশের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে চারকোণা জানালা গলে ঠিক মুখের উপর পড়ার কথা। সাজিদ যেহেতু বড়লোক না, মেসে থাকে, এই আলো আসছে ভেন্টিলেটর দিয়ে! অনেকসময় বাথরুম জানালা ছাড়া হয় মানা যায়, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই ঘরে কোন জানালা নেই! ঢাকা শহর বলে এটা সম্ভব, ময়মনসিংহে এরকম বাসা পাওয়া যাবে না! কে জানে কয়টা বাজে! সাজিদ যদি আঠারো ঘন্টা ঘুমায় তাহলে এখন বিকাল গড়ায় সন্ধ্যা, আর যদি ছয় ঘন্টা ঘুমায় তাহলে এখন ভোরবেলা! ঘুম থেকে ওঠার পর-পর এই দুটো সময়ই একই লাগে! সাজিদের অবশ্য এখনকার সময় বন্টন ভালো লাগে না। ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বেরও কিছু পূর্বে যখন ফারাও সম্রাটরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিন এবং সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত রাত গণনা করতো সেটাই বরং ঠিক ছিল। ভালো না লাগার আরেকটা কারণ সে রাত জাগতে পারে না! এই রাত না জাগতে পারার অপরাধে তার যে কত প্রেম হতে হতে হয় নি তা সে জানে, আর তার ফোন জানে।
আচ্ছা ফোনটা কোথায়? সাজিদ চোখ বন্ধ রেখে বিছানায় হাতড়ায়, সেই হাত একটা উষ্ণ শরীর স্পর্শ করে! পলাশ পাশে শুয়ে। পলাশ সাজিদের ক্লাসমেট+বেডমেট। এই নিয়ে ক্লাসের পোলাপান তাদের ক্ষেপায়, কিন্তু তাদের যে ছোট রুম তাতে করে দুইটা খাট রাখার মতো অবস্থা নেই! ক্ষ্যপা-ক্ষ্যেপির ব্যাপার পরে! তাদের খাটটাও খুবই অদ্ভুত, অনেকটা নৌকার মতো! ম্যাট্রেস এর নীচের তক্তাগুলোর অর্ধেকটা আরেকপ্রান্ত পর্যন্ত না পৌছানোর কারণে এই অবস্থা! খাটের ডান পাশে তাও শোয়া যায়, বামপাশ সবসময় সাপোর্ট লাগে। রাতে পলাশের মাঝে মাঝে পায়ে টান পড়ে, সে যদি ধড়ফড় করে উঠে পড়ে, সাজিদ গড়ায় পড়তে থাকে খাটের নীচে। এই খাট নিশ্চয় ‘লকি’ বানাইছিল, না হলে এরকম অদ্ভুতও খাট হয়? লকির কাজ ভাইকিংসদের নৌকা বানানো, সে খাট বানাতে গেল কি মনে করে কে জানে! তারা অনেকবার ঠিক করেছে এই খাট ঠিক করা দরকার, কিন্তু ব্যাচেলর বাসায় এইসব ঠিক করা-করি হয় না! ফোনটা পাওয়া গেল না, খাটের নীচেই হবে তাহলে! আরো কিছুক্ষণ ঘুমালে কেমন হয়! নাহ্ ঘুম আসছে না। এক কাজ করা যাক, লকির সাথে মনে মনে কথা বলা যাক, নাকি নেফারতিতির সাথে কথা বলবে? সাজিদের ধারণা মনে মনে কথা বলা মানুষকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
– নেফারতিতি, কেমন আছো?
– ভালোই
– মিশরে থাকতে কেমন লাগে?
– ভালো লাগে না।
– ভালো না কেন?
– আমার জামাই একটা খাইষ্টা, তাই। জামাই ম্যাটেরিয়ালরা অবশ্য সবসময় এরকমই হয়।
– ও! তোমরা মানুষকে মমি করো কেন?
– আরে মমি করি কই? খারাপ সম্রাটদের মারা যাওয়ার পর গুয়ে চুবানো হয়।
– কি বলো এসব?
– হ্যাঁ, তারপর তাদের কাঠের বাক্সে ভরে নীল নদ পার করে পশ্চিমের দেশে পিরামিডে রেখে আসা হয়, যাতে তাদের আত্মা কারো উপর ভর না করে।
– আমার সাথে ফান করতেছ, না?
– তুমি ফান বুঝো?
নেফারতিতিও পাত্তা দিল না। আজ ভার্সিটি বন্ধ, আগামীকাল সারাদেশে নির্বাচন -এ কারণে বন্ধ। সাজিদ ভেবেছিল ময়মনসিংহ যাবে, হলো না নতুন টিউশনির কারণে। মাত্র তিনদিন হলো টিউশনি শুরু করেছে এই মুহুর্তে দেশে গেলে টিউশনিটা যাবে। যে ছেলেটাকে সে পড়ায় সে একটা বান্দরের আব্বা, নাম তমাল! প্রথমদিন তমাল বলেছে স্যার আজকে পড়তে ভালো লাগছে না, প্রথমদিন বলে সাজিদ কিছু বলে নি। দ্বিতীয় দিনও একই অবস্থা, তবে সেদিন বুঝিয়ে শুনিয়ে একটু আধটু পড়ানো গেছে। তৃতীয় দিন সে পড়বে না তো পড়বেই না। ক্লাস নাইনের ধামড়া ছেলে সাইজে সাজিদের দ্বিগুণ এরকম করলে কেমনটা লাগে বলোতো বাবা! সাজিদ তাকে একটা কঠিন ঝাড়ি দিয়েছে, যদিও তাতে কোন কাজ হয় নাই। তাকে যখন অঙ্ক করতে বলেছে সে প্রত্যেকটা পৃষ্ঠায় বড় বড় করে একটা-একটা অঙ্ক লিখেছে। সাজিদ আরো মেজাজ খারাপ করতে যেয়েও করে নাই। এই বাসায় সে আসলে যায় বইয়ের নেশায়। মানুষের সোকেচ ভর্তি থালা-বাসন থাকে, এই বাসার সোকেচ ভর্তি বই। সে বইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় আছে। তমাল বলে বসলো স্যার ব্যাগে করে আবার বই নিয়ে চলে যেয়েন না, তসলিমার বইতো না-ই! আসলেই তো, তসলিমার বইও আছে দেখি! তসলিমার কথা মনে পড়তেই সাজিদের মনে আজেবাজে চিন্তা চলে আসছে। আচ্ছা, বাসায় যেসব মহিলারা টাকার বিনিময়ে কাজ করে তাদের তো বলে চাকরানী, আচ্ছা তাহলে ফা*রানীর সংজ্ঞা কি হবে?
প্রচন্ড পেশাবের চাপ এসেছে, এখন বিছানা থেকে উঠতে হবে। বাসায় কোন কমোড নেই, নরমাল প্যান; হিসেবে এটাই স্বাস্থ্যের জন্যে ভালো। গতকাল পেস্টটা শেষ হয়ে গেছে, পলাশের পেস্টটা খুজে বের করতে হবে। মানুষ রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ করে, সকালে খাওয়ার পর ব্রাশ করে। সাজিদের এটা লাগে পায়খানায় যাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার মতো এবং পায়খানা থেকে আসার পর কোন দরকার নাই টাইপ। যেন মিনার দৈত্য এসে বলছে, “এই যে ছোট্ট বন্ধু হাত ধোও, পায়খানায় যাওয়ার আগে হাত ধোও”। সাদা একটা টিউব টেবিলের উপর দেখা যাচ্ছে। চোখ মুছতে মুছতে টিউব থেকে পেস্ট নিয়ে সাজিদ মুখে দিয়ে বুঝতে পারছে এটা স্যাভলন ক্রিম। ধুর সকালটাই নষ্ট। সামনের সপ্তাহে একটা এসাইনমেন্ট জমা, সেটার কি কাজ করতে বসবে এখন? একটা কন্স্যাল্টেন্সি ফার্ম থেকে নাটোরে পাঠানোর কথা সামনের সপ্তাহে, তারাও তো কিছু জানালো না। সারা দেশে মাস্টারপ্ল্যানের কাজ চলছে, আগামী বিশ-বছরে কি কি উন্নয়ন হবে তার একটা মহাপরিকল্পনা। সাজিদের কাজ ম্যাপিং করা, কোথায় বাড়ি, কোথায় কারখানা, কোথায় ইলেক্ট্রিকপোল বা কোনদিক দিয়ে রাস্তা গেছে সেটা আকা। সে অবশ্য একা যাবে না, ক্লাসের কয়েকজন মিলে যাবে। সে আগেও নাটোরে গেছে অবশ্য। সবাই জানে নাটোরের বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা বা বনলতা সেন, তবে সাজিদের কাছে নাটোরের বিখ্যাত পাখির মাংস, পচুর হোটেলের পাখির মাংস! সেসব পাখি সচারচর পাওয়া যায় না, রান্না করা তো না-ই।
ফোনটা খাটের নীচেই পাওয়া গেল, পড়ে দুইভাগ হয়ে গেছে। জোড়া লাগায় চালু করতে করতে দেখা গেল ত্রিশটা মিসকল! মেয়েটা পারেও, এত গুলো মিসকল কেউ দেয়?
– হ্যালো, নিশা। (নিশা সাজিদের ক্ল্যাসমেট)
– কই ছিলা তুমি?
– ঘুমাচ্ছিলাম।
– ঘুমাচ্ছিলা ভালো কথা, আমাকে জানাবা না?
– ঘুমালে জানাবো কিভাবে?
– মানুষের আক্কেল জ্ঞান তো থাকে! সামনের সপ্তাহে না আমাদের এসাইনমেন্ট জমা? তোমার না এলিফ্যান্ট রোডে আসার কথা? গ্রুপের সবাই আসলো, তোমার পাত্তা নাই। স্যারকে আমি বলবো গ্রুপে তোমার কোন কন্ট্রিবিউশন নাই।
– যা খুশি বলো।
টুট-টুট করে ফোনটা কেটে গেল। মেয়েটাকে না চেতালেও হতো, এখন মনটা খারাপ লাগছে। আবার ফোন দিবে না কি? ধুর আজকে আর না। এমনিতেই কাল জাতীয় নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন ছেড়ে এসব ফাতরা বিষয় নিয়ে ভাববার সময় কই? বুয়া রান্না করে বাটি করে রেখে গেছে। একেক জনের এক একটা বাটি, যে আগে খাবে তার বাছাই করার সুযোগ আছে। আজকের আইটেম কই মাছ বেগুন দিয়ে আর ডাল। এই বুয়া গুলো কেন জানি মাছ ঝোল রান্না করতে পারেনা। এদের কে বুঝাবে পৃথিবীর সব সাধারণ রান্নাই একই রকম, শুধু জানতে হবে কোনটায় আদা-রসুন বাটা দেওয়া যাবে, কোনটায় যাবে ন!। গরম তেলে পেয়াজ ছেড়ে দিতে হবে, একটু ব্রাউনিশ হয়ে গেলে শুকনা মরিচের গুড়া, হলুদের গুঁড়া দিয়ে কসানো। এরপর একটু পানি ঢেলে মাছ ছেড়ে দেওয়া। পেঁয়াজটা বেশী করে দিতে হবে এই যা। সকালের আলু ভর্তাও আছে দেখা যায়, ভালোই। সাজিদ সবগুলো বাটির মুখ খুলে খুলে দেখে কোনটায় মাছের সাইজ একটু বড়। পৃথিবীতে সবাই বড় জিনিস চায়, কেউ কম্প্রোমাইজ করতে রাজি না।
এসাইনমেন্ট নিয়ে আসলেই বসা দরকার, সাজিদেরই এসাইনমেন্টটা করতে হবে শেষ পর্যন্ত তা সে জানে। নিশাও সেটা জানে, হুদাই ভাব নিল। দুপুর তিনটা পনেরো। তিনটা পনেরো খুব অদ্ভুত সময়, তবে রাতের বেলা। সিনেমাতে দেখায় এসময় ভূত মানুষের উপর ভর করে, এদিক দিয়ে ওদিক দিয়ে এসে উঁকি দেয়। সাজিদের খুব ইচ্ছা ভূত দেখার। শেওড়া গাছের পেতনি হলে ব্যাপারটা জমে। আশেপাশে শেওড়া গাছ আছে কি না কে জানে! একদিন সময় পেলে খুঁজে দেখবে।
– টুকি (সাজিদ)
– ওই, ভয় ডর নেই তোর? টুকি বলতেছিস! নাকি তুই বাংলা সিনেমার নায়ক? (পেত্নি)
– তুমি আমার সাথে প্রেম করবা? (সাজিদ)
– বা*র কথা বলার জায়গা পাস না? তুই তো রাতে জাগতেই পারস না! (পেত্নি)
– গালাগালি করতেছ কেন? (সাজিদ)
– তা কি করবো, তোরে চুমা খাবো? তোর না গ্রুপ মিটিং-এ যাওয়ার কথা ছিল? (পেত্নি)
পেত্নিকে এখন নিশার মতো লাগতেছে, পেত্নির চেহারা হবে খারাপ, তাকালে শরীরে একটা হিম ভাব আসবে! নিশার চেহারা এদিকে ভালো, শুধু ভালো বললে কম বলা হবে! এইসব হাবিজাবি চিন্তা, বের হতে হবে, টিউশনিতে যেতে হবে।
বাসে এক ফোটা জায়গা নেই। একটা রোগা মেয়ের পাশের সিটটা খালি। মেয়েটা এতই রোগা যে কেউ যদি তাকে না দেখে তার কোলে বসে পড়ে তাও দোষ দেওয়ার কিছু নাই। সাজিদেরও সেরকম ইচ্ছা হলো, পরে না হয় সরি বলে নেওয়া যাবে! রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। এত মানুষের চাপে বাস আটকে আছে মিরপুর-১ এ। কি জানি বাস আবার ঘুরায় দেয় কি না! তাহলে আর টিউশনিতে যাওয়া হবে না। হঠাৎ কে জানি হাত চেপে ধরলো! সাজিদ ঘুরে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই হাত সরায় নিল মেয়েটা।
– সরি।
– ইট’স ওকে।
– আসলে আমি ভয় পেয়েছিলাম, ভেবেছি ঐ লোক গুলো গাড়ী ভাঙতে আসছে।
মেয়েটা এরকম শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেছে কেন কে জানে? সাজিদ খালি বললো,
– ওহ।
– আচ্ছা, আপনার নাম কি?
– কেন?
– না, এমনি।
– তোমার নাম কি?
– কণা, ঐ যে একটা মেয়ে আছে গান করে তার নামে নাম।
নামের সাথে মেয়াটার সাইজের মিল আছে, যেমন রোগা পটকা, বাপ-মাও সেরকম নাম দিছে। এর নাম হওয়া উচিত ছিল ধূলিকণা!
– ও।
– আচ্ছা। আপনি কোন দল করেন?
– ম্যানচেস্টার সিটি!
– আরে নাহ্, বলতে চাচ্ছিলাম কাকে ভোট দিবেন?
– কোন দল করি না তো।
– জানেন, আমার ম্যাডামকে খুব ভালো লাগে। উনি খুব স্টাইলিশ। আর আমার বাবা সিবিএ নেতা তো, উনি যদি জিততে না পারেন তো বাবার ট্রান্সফার হয়ে যাবে।
– ওহ।
– আপনি খালি ও, ওহ্ এগুলা বলেন কেন? যাই হোক আপনি দোয়া করেন ম্যাডামের জন্য, কেমন?
– ঠিক আছে।
আচ্ছা ম্যাডাম কি এবার নির্বাচনে জিততে পারবে, সাজিদ মনে মনে ভাবে। পারলেই কি না পারলেই বা কি? নির্বাচনের মানুষ হই হুল্লোড় করবে, আনন্দ করবে এতেই মজা! কেউ অতি উৎসাহি মারা না গেলেই হলো! কিছু মানুষ সবসময় থাকে যারা অতি উৎসাহি হয়ে মারা যায়, যদিও হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে, অতি উৎসাহি হওয়ার তো দরকার নাই, তাই না?
– কি ভাবছেন?
– নাহ্, কিছু না। তুমি কোথায় পড়ো?
– মিরপুর কমার্স কলেজে, ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। আর থাকি মিরপুর সাড়ে এগারো।
– ওহ।
– জানেন, আমার না বিইউবিটি তে পড়ার খুব ইচ্ছা। দোয়া করবেন কেমন।
– তোমার মনে হয় আল্লাহ আমার সব দোয়া কবুল করেন?
– কেন?
– জাতীয় ইস্যু, ঘরের ইস্যু সব কিছুতেই দোয়া করতে বলতেছ তো, তাই বললাম। এক কাজ করো, তোমার গলায় যে চেইনটা আছে খুলে দাও আমি দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে দিই, তাহলে দেখা যাক কাজ হয় কি না!
– কি দোয়া পড়বেন?
– বাদ দাও।
– আপনি কোথায় যাচ্ছেন?
– আসাদগেট, বোনের বাসায়। আমার দাওয়াত, তাই।
সাজিদ কেন মিথ্যা বললো, কে জানে! মিথ্যা না বললেও হতো! মনে মনে বললো Lieutenant (লাই-ইউ-টেন-এ্যন্ট)! আচ্ছা পিঁপড়া কি মিথ্যা কথা বলে? বলে হয়তো! নিশা অবশ্য বলেছে, যে মিথ্যা বললে মানুষের কোন ক্ষতি হয় না, সেটা কোন মিথ্যা না! ধুর নিশার কথা খালি মাথায় ঘুরছে, মেয়েটাকে রাগানো উচিত হয় নি।
– ও। জানেন আমি না বাসা থেকে চলে এসছি।
– মানে কি?
– আম্মু বকা দিয়েছে, তাই আমি রাগ করে চলে এসেছি।
– ও।
এর শুদ্ধ ভাষায় বকবকানি বিরক্ত লাগতেছে, এর ভাষা ‘পার্টি হোরাহিয়ে’ ধরণের!
-জিজ্ঞেস করলেন না, বাসায় ফিরে যাবো কি না? জানি, আপনার এসবে আগ্রহ নেই। জানেন, আমি আর বাসায় যাবো না।
– তাহলে কি প্ল্যান তোমার?
– আমি এখন খালার বাসায় যাচ্ছি। আর খালাকে নিষেধ করে দিব আম্মুকে যেন না জানায়।
– হা, হা, হা।
– হাসছেন যে? আমার খালা আমার চেয়েও ডেঞ্জারাস, হাসার কোন কারণ নেই। আমি দোয়া করি আপনার যেন আমার খালার মতো একটা ডেঞ্জারাস শাশুড়ি হয়।
– হাসছি কারণ তোমার চিন্তা-ভাবনা বাচ্চাদের মতো।
– হুউ, আন্দাজি, জানেন কত ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে, কিন্তু আমি কাউকে পাত্তা দিই নি। আপনার আমাকে কেমন লাগে?
– ভেবে দেখি নি।
বাস আসাদগেটের কাছাকাছি জায়গায় থেমে আছে। হেল্পার নামেন, নামেন বলে চেঁচাচ্ছে। কিছু লোক ভাড়া ফেরত চাচ্ছে। সাজিদ নেমে গেল, কণাও পেছন পেছন নামলো।
– কোথায় যাচ্ছেন?
– বোনের বাসায়।
– আমাকে এইভাবে ফেলে চলে যাচ্ছেন?
– আমার দাঁড়ানো উচিত ছিল?
– একটা মেয়ে এখন কি ভাবে যাবে, ভেবে দেখা উচিত না?
আজ স্টুডেন্টদের বাসায় না গেলে, টিউশনিটা মনে হয় হাতছাড়া হয়ে যাবে। ধুর, কি যে করি !!! এই হ্যাংলা মেয়েটা এরকম হ্যাংলামি করছে কেন কে জানে!!
– তা কোথায় যাবা?
– এলিফ্যান্ট রোড।
– চলো তোমাকে রিক্সা ঠিক করে দিই।
– আমার কাছে ভাড়া নেই।
– এই মামা যাবা? এলিফ্যান্ট রোড।
– ষাট টাকা!!
– ওঠো, আমি ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।
– আপনিও চলেন না? আমার ভয় করছে।
– চলো যাই।
– জানেন, আমার না হাওয়াই মিঠাই পছন্দ। কি সুন্দর কালার।
– ও।
– আপনার কি পছন্দ?
– আমার সবকিছুই ভালো লাগে।
– যাহ, তা আবার হয় নাকি!!
– আমার হাত ধরেছ কেন আবার?
– ভয় লাগছে, তাই। আম্মু যদি আবার বাসায় ধরে নিয়ে যায়!!
ভালো যন্ত্রণায় পড়া গেল, মাথা খারাপ না কি এই মেয়ের? শেষ পর্যন্ত পাগলের পাল্লায় পড়লাম!! রিক্সা প্রায় এলিফ্যান্ট রোডের কাছাকাছি।
– আচ্ছা, আপনার কি জিএফ আছে?
– কেন আমাকে দেখে লিফট মনে হয়?
– আরে নাহ্, লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোর না, গার্ল-ফ্রেন্ড, গার্ল-ফ্রেন্ড।
– আছে, নাম নিশা। আর সে যদি দেখে তুমি আমার হাত ধরে বসে আছ, তাহলে কি হবে বুঝতেছ?
– না বুঝতে পারছি না। আমি নামবো। এই রিক্সা থামান।
মেয়েটা চ্যাঁচামেচি শুরু করবে না তো আবার? মেয়েদের ভরসা নেই। রিক্সা ভাড়া দেওয়ার পর সাজিদের মানিব্যাগ খালি হয়ে যাবে। তারপরও সাজিদ বললো,
– চলো, তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। তোমার আম্মু টেনশন করবে শুধু শুধু।
– না আমি যাবো না, আপনি নামেন রিক্সা থেকে। আর ভাড়াটা দিয়ে যান। আমার কাছে রিক্সা ভাড়া নেই।
– আচ্ছা।
– আপনার মোবাইলটা দেখি।
– কেন?
– আরে দেন না।
-এই নাও।
– এটা আমার সেলফোন নম্বর। কখনও মনে হলে ফোন দিয়েন আমাকে। আর আপনার জিএফ অনেক লাকি। বাই।
– বাই।
সাজিদের নিজেকে বোকা মনে হতে লাগলো, শুধু বোকা না তার সাথে বিশেষণও আছে। রিক্সাওয়ালা তার দিকে ঘুরে তাকালো কয়েকবার। নিশ্চয় মনে মনে বলেছে এই শালা একটা বিরাট গাধা। দুই গলি পর নিশাদের বাসা। নিশার কাছে টাকা নিতে হবে, না হলে আজকে হেটে-হেটে বাসায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কলিংবেল দিতে নিশা দরজা খুললো।
– আমি জানতাম তুমি আসবা!
– হ্যা কি আর করা, সকালে তোমার মেজাজ খারাপ করছি, এখন তো একটু কম্পেন্সেট করতেই হবে, না?
– ভালো করছো, এখন আর রাগ নেই।
– তুমি এক কাজ করো, লাউঞ্জে গিয়ে বসো, আমি ল্যপটপ নিয়ে আসি!
সাজিদ লাউঞ্জের দিকে এগিয়ে গেল, দেওয়ালে পেন্টিং দেখতে দেখতে সোফায় বসে পড়তে যাচ্ছে, ওমনি কে বলে উঠলো,
– আরে আপনি আমার কোলে বসবেন না কি? আর আপনি এখানে কি করেন?
– আরে ধূলিকণা, তুমি এখানে কি করো? তুমি যে শুকনা-পাতলা দেখতে পাই নি!
ধূলিকণা গরম চোখে তাকায় আছে!
– আমাকে ধূলিকণা বলে ডাকতেছেন কেন? বাই দা ওয়ে, নিশা আমার খালাতো বোন, হুউ।।
Khubi bhalo likhso Sabbir bhaiya!! ❤️
Moja pelam pore!!!