ডায়েরির পাতা থেকে…

জান্নাতুন নাহার

0
120


আজ মেন্টোরিং মিটিং ডিপার্টমেন্ট চেয়ারের সাথে। ষাটোর্ধ্ব সার্বিয়ান শ্বেতাঙ্গ নারী, চোখে-মুখে ক্লান্তির আর সময়ের ফেলে যাওয়া ছাপ। রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ল টেবিল ভর্তি কুকিস আর ক্রিম। আমাকে বসতে বলে কয়েকবার খেতে বলল—“প্লিজ খাও, কেউ না খেলে, আমিই খেয়ে ফেলছি আর সুগার আমার জন্য একদম ভালো নয়, প্লিজ সেভ মি।” আমি তাকে বাঁচানোর কোন প্রচেষ্টা করলাম না, মৃদু হাসলাম যেন তার কথার রসবোধ বেশ ভালো। আসলে আমি রোজা আছি, সেটি তাকে বলতেও ইচ্ছে করছিল না।

প্রথমেই এক ছাত্রকে নিয়ে কিছু কথা হলো, এবং কথার মাঝে সে খুব হাসছিল কিন্তু কি নিয়ে হাসছিল, ঠিক মনে পড়ছে না এখন। তারপর কথা হলো ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইভ কোর্স নিয়ে। বলল, “মেক্যানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট, ওদের এনরোল্মেন্ট সবচেয়ে ভালো এখনও পর্যন্ত। ওরা নিজেদের কাজ খুব ভালোভাবে বিক্রি করেছে। অথচ সবখানে আমাদের ডিসিপ্লিন ছাড়া কি কোন কাজ হচ্ছে! কিন্তু অন্যরা দাবী করছে এটা তাদের কাজ। ছাত্ররা তো বিভ্রান্ত! এই ধরো, এআই—সে তো আমরাও করি। এটা শুধু কম্পিউটার সাইন্সের এর কাজ না।”

ফ্রেশারদের সাথে তার একটা মিটিং হবার কথা। জানতে চাইলাম—মিটিং কেমন হলো? বলল, “প্রথমে ভেবেছিলাম শুধু মেয়েদেরকেই ডাকবো কিন্তু কিছু নাম দেখে তুমি জেন্ডারই বুঝবে না, এমনকি তাদের ছবি দেখেও না, অনেকে আবার সব চেঞ্জ করে ফেলে, ব্যাপারটা অফেন্সিভ হয়ে যাবে তখন।” কথা বলতে বলতে কুকির একটা টুকরো গড়িয়ে পড়েছে, চকোলেটের ছাপ তখন তার সাদা জামায়। কিছুটা বিরক্তিতে বলল, “এই জামা আমি কিনেছিলাম মিশর থেকে। ওই শহরের নাম –”।

ইজিপ্ট এর ইতিহাস কিছুক্ষণ আলোচনার পর। বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি নিয়ে জিগ্যেস করল। আর বিস্তারিত জানতে চাইল আমার বাড়ি যাবার ব্যপারে। বাবার কবর জিয়ারত করতে না পারব না শুনে বলল—

Is there any god’s place where men can’t go, only women can go?

আমার কাছে কোন উত্তর ছিল না তার কথার।

—ডায়েরীর পাতা থেকে, কয়েক মাস আগে লেখা।
জান্নাতুন নাহার তন্দ্রা, শিক্ষক, লিহাই বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here