Subscription Plans

Free limited access

Free
/ forever
  • Etiam est nibh, lobortis sit
  • Praesent euismod ac
  • Ut mollis pellentesque tortor
  • Nullam eu erat condimentum
  • Donec quis est ac felis
  • Orci varius natoque dolor

Member full access

$
100
$
10
$
0
/ year
  • Etiam est nibh, lobortis sit
  • Praesent euismod ac
  • Ut mollis pellentesque tortor
  • Nullam eu erat condimentum
  • Donec quis est ac felis
  • Orci varius natoque dolor
Yearly pricing
Monthly pricing

ভয়

SabbiRif

১.
মারুফের কাছে আজকের সূর্যটা আরও বেশী লাল মনে হচ্ছে! সকালে হাঁটতে হাঁটতে গল্লামারী ব্রিজের কাছে গিয়েছিল, অনেক লাশ আর মাথার খুলি পড়ে সেখানে! লাশ দেখতে আর ভালো লাগে না! কেন যে অন্য দেশ থেকে এ দেশে এসেছিল, কে জানে? না এসেও অবশ্য উপায় ছিল না, তখন হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা। অথচ কোন ধর্মই কখনও অযথা মানুষ খুন করতে বলে না! ধর্মের নামে যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের আসলে কোন ধর্ম নেই। বড় ভাই আর বোনেরা অবশ্য আরও আগেই চলে এসেছে পূর্ব পাকিস্তানে, সেও চলে আসলো তাদের পথ ধরেই।

মাঝে মাঝে মারুফের যুদ্ধে যেতে ইচ্ছা হয়, দেশটাকে আপন আপন লাগে। পরক্ষণেই মনে হয় না থাক, আমার কী? আশে পাশে তেমন কেউ পরিচিতও নেই যে যুদ্ধে গেছে; তবে পরিচিত কিছু লোক আছে যারা পাক বাহিনীর দোসর। এরা অস্ত্র দিয়ে ঘর-বাড়ী লুট করে, তবে মানুষ মারে না – এই যা! এক কথায় ডাকাত, আত্মীয় বলে পরিচয় দিতেও ঘিন লাগে! থাকার জায়গা নেই, খাওয়ার কোন ঠিক ঠিকানা নেই তাই বাধ্য হয়ে থাকা ওদের সাথে। তবে শুনতে খারাপ লাগলেও একটা সুবিধা যেটা হয়েছে, এই বাড়ীতে পাক বাহিনীরা আক্রমণ করবে না!

মাঝে মাঝে মনে হয় দেশে চলে যাবে, কত শত লোক ওপারে চলে গেছে; এখন আর ওদিকে দাঙ্গাও তেমন নেই টুকটাক ছাড়া। কিছু একটা করে কেটে যাবে বাকী জীবনটা! এই শালা মন এমন একটা জিনিস, কিছুতেই আবার ফিরে যেতে চায় না! কবে এই যুদ্ধ থামবে কে জানে, বাংলাদেশ থাকলেও তার কোন যায় আসে না, পাকিস্তানেও না। তবে শেখ মুজিবর রহমান সাহেবের ভাষণ তার ভালো লাগে; রক্ত গরম হয়ে যায়। তখন মনে হয় সে ও এই দেশের একটা অংশ, দেশের জন্যে ঝাপিয়ে পড়তে ইচ্ছা হয়। আবার ভয়ও করে, মরার ভয়! মরার ভয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভয়!

ইদানিং রাস্তায় পাকীরা দাঁড় করায়, ডান্ডি কার্ড (আইডি কার্ড) দেখতে চায়, চার কলেমা মুখস্থ বলতে বলে, লুঙ্গীর মধ্যে পর্যন্ত দেখে আগা কাটা কি না! মারুফ দুইটা কলেমা ভালো ভাবে জানে, বাকী দুইটা জানে না। ঐ হারামি গুলাও জানে কি না সন্দেহ আছে! অবশ্য সে কোন বাড়ীর ছেলে এটা বললে পাকীরা ছেড়ে দেয়! মারুফের বিড়ির নেশাটা ইদানিং বেড়েছে, কোন কাজ না থাকলে যা হয় আর কি! বাসায় একটাও বিড়ি নেই, দুপুরে ভাত খেয়ে বের হতে হবে। জোসেফ স্কুলের পাশের দোকানটা খোলা পাওয়া যাবে হয়তো। খুচরো কিছু পয়সা বালিশের তলায় আছে। খুচরো পয়সা নিয়ে যেতে হবে, দুর্দিনে কারো কাছে ভাংতি পাওয়া যাবে না। তার টাকা-পয়সাও ফুরিয়ে আসছে! বড় ভাই আপাতত টাকা দেয়, তার তিনশ টাকা বেতন, ছয়জনের পরিবার তার উপর আবার মারুফকে চালাতে হয়। একবেলা না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু একবেলা বিড়ি না খেয়ে টেকা কঠিন।

২.
মারুফ কতক্ষণ ঘুমিয়েছে কে জানে! মাথার কাছের জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, সন্ধ্যা হবে হবে ভাব। উফ! ইদানিং ছারপোকা গুলো খুব জ্বালায়, কুট কুট করে রক্ত খায়। হয়তো একদিন পাকবাহিনীও দেশ ছেড়ে চলে যাবে কিন্তু এই বালের ছারপোকা কখনও যাবে না! বিড়ি খেতে হবে, মারুফ রওনা হয়। জোসেফ স্কুলের দোকানদারটা তার চেনা, হ্যাঁ খোলা আছে; মারুফ স্বস্তি অনুভব করে। আসার সময় সে ময়লাপোতা হয়ে এসেছে, কিছু পাক আর্মি পজিশন নিয়ে বসে আছে। কয়েকটা বস্তা জড় করে তার উপর বন্দুক ধরে বসে আছে একজন! উদাস চাহনী, বয়স বাইশ হবে, একদিন জিজ্ঞেস করে দেখতে পারলে ভালো হতো, মানুষ মারতে কেমন লাগে? কদাচিৎ দু’একজন কে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। দেশ স্বাধীন হলে একটা কাজ খুঁজতে হবে, রেনুকাকে বলতে হবে সে তাকে পছন্দ করে, রেনুকা করে কি না কে জানে! তাদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হবে, তার নাম রাখবে মানুকা, মারুফের ‘মা’, রেনুকার ‘নুকা’! আচ্ছা মানুকা নামের কোন অর্থ আছে?

– ভাইজান কেমন আছেন?
দোকানদারের নাম আজিজ মিয়া। তিন ফুট বাই ছয় ফুটের দোকান, একটা গদি ওয়ালা টুল, সেটা তার বসার জায়গা না, তার বসার জায়গা মাটিতে, গদির উপর জিন্নাহ সাহেবের ছবি। জিন্নাহ সাহেবের মাথায় টুপি নেই। টুপি ছাড়া জিন্নাহ সাহেবের ছবি সচারচর দেখা যায় না।
– যুদ্ধের দিনে যেমন থাকা যায়, বিড়ি দেন।
– কয়টা?
– দেন কুড়িটার মত, একটা ম্যাচও দিয়েন সাথে। বারাবার বাসা থেকে বের হওয়া ঝামেলা!
– ভাইজান, একটা কথা বলবো?
– বলে ফেলেন।
– একটা উপকার করতে পারবেন?
– শুনি!
– আপনাকে একটা ব্যাগ দিব, ব্যাগটা সোনাডাঙ্গায় আজিজ মাস্টারের বাসায় পৌছায় দিতে হবে।
– কি আছে ব্যাগে?
– কিছু গোলা বারুদ আর কি, মুক্তিবাহিনীর জন্য।
– আপনার মাথা খারাপ? ময়লাপোতায় দেখে আসলাম মিলিটারীরা মানুষজনকে ডেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করছে। গল্লামারীতে আজ কতগুলো লাশ দেখেছি গুণে শেষ করা যাবে না! আর আপনি বলছেন ব্যাগটা দিয়ে আসেন। এটা কি মামা বাড়ীর আব্দার? আজিজ মাস্টার আমার মামা লাগে?
– ভাই আপনি যে বাড়ীর ছেলে, তাতে করে আপনাকে কেউ সন্দেহ করবে না!
– হ্যাঁ, আমার গায়ে তো লেখা আছে আমি কোন বাড়ীর ছেলে! এজন্যে দূর থেকে দেখেই বুঝে ফেলবে। খালি হাত-পায়ে ওদিক দিয়ে গেলে মানুষজনকে ডাক দিচ্ছে আর আপনি বলছেন ব্যাগ নিয়ে যেতে। আশ্চর্য!
– ভাই আপনাকে জিজ্ঞাসা তো করবে, কোথায় থাকেন?
– হ্যাঁ তা হয়তো করবে।
– দেশ স্বাধীন না হলে আর বিয়ে-শাদী করা লাগবে না!
মারুফ চিন্তায় পড়ে যায়, তাহলে কি তার রেনুকাকে বিয়ে করা হবে না?
আচ্ছা দেন দেখি কি করা যায়। তবে পৌছায় দিতে পারবো কি না কোন গ্যারান্টি নাই, ভাব-সাব খারাপ দেখলে ফেলে দিব!
– আচ্ছা।

মারুফ মনে মনে দোয়া পড়ে, সামনে মিলিটারিদের দেখা যাচ্ছে! আজ মনে হয় ধরা খেয়ে যাবে। কেন যে এইগুলা আনতে গিয়েছিল! ঐ তো একটা লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে, না ঠিক তার দিকে তাকিয়ে নেই; লোকটার নজর ব্যাগের দিকে! আজ মনে হয় মারুফের জীবনের শেষ দিন, সে মনে মনে সূরা ফাতিহা পড়ে, না টেনশনে উচ্চারণ ভুল হচ্ছে, ছোট সূরা পড়তে হবে, ভুল করা যাবে না! মারুফ সূরা ইখলাস পড়া শুরু করে। পকেট হাতড়ায়, ডান্ডিকার্ডটা খুঁজে পাচ্ছে না এখন! নাহ্‌! আজ মনে হয় বেঁচে গেল, মিলিটারীদের প্রায় পার হয়ে এসেছে! এমনসময় কে জানি মারুফ বলে পেছন থেকে ডাক দিল, গলাটা পরিচিত মনে হচ্ছে! মারুফ ঘুরে দাঁড়ায়, সেন্টু ভাই – একই বাসায় থাকে তারা। নিশ্চয় মিলিটারীদের বলতে এসেছে আজ কোথায় লুট করতে যাবে। মারুফ এগিয়ে যায়। তার হাত কাঁপছে, সাথে পা ও!

– কি রে কই যাস?
– মেজ খালার ওখানে।
– হাতে ব্যাগ কিসের?
– খালা বলেছে ওখানে এক সপ্তাহ থাকতে, এখানে কি খাই না খাই, তাই!
– ও! শোন রাতে ভালো খাওয়া দাওয়া আছে, একটা হরিণ মারা হয়েছে, সাথে কিছু খাসী। চলে আসিস। এই ভাইদের (পাকীদের) দাওয়াত করতে এসেছি, ওরাও যাবে!
– আচ্ছা।
– দাঁড়া, তোকে পরিচয় করিয়ে দিই।

সেন্টু ভাই ভাঙা-ভাঙা উর্দুতে মারুফকে মিলিটারিদের সাথে পরিচয় করে দিল। মারুফের ভয় তখনও কাটে নি। ঐ মিলিটারিটা এখনও তার ব্যাগের দিকে তাকিয়ে আছে।

৩.
মানুকা সবে মাত্র বাসায় ফিরেছে, আজ ওর চাকুরীর ভাইভা ছিল। কেমন হয়েছে কে জানে! মারুফ বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকে, তাদের দুই কামরার ঘর! ছোট চাকুরী করেই জীবনটা পার হয়ে গেল, মেয়েটাকে সে ছেলের মতো করেই বড় করেছে।

– কিরে মা, ভাইভা কেমন হলো?
– জানো বাবা, আজ যেখানে ভাইভা দিতে গিয়েছিলাম সেখানে তিনজন নিবে! একজন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোঠা, একজন আদিবাসী কোঠা আরেকজন সাধারণ! সেন্টু চাচার ছেলে আবীর আসছে মুক্তিযোদ্ধা কোঠায়, ওর চাকুরীটা পাকা, তাই না বাবা? আচ্ছা বাবা, তুমি যুদ্ধে যাও নি কেন?
– ভয়ে মা, ভয়ে!

SabbiRif এর সবগুলি গল্প পড়ুন এখানেঃ সাব্বিরিফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles