Subscription Plans

Free limited access

Free
/ forever
  • Etiam est nibh, lobortis sit
  • Praesent euismod ac
  • Ut mollis pellentesque tortor
  • Nullam eu erat condimentum
  • Donec quis est ac felis
  • Orci varius natoque dolor

Member full access

$
100
$
10
$
0
/ year
  • Etiam est nibh, lobortis sit
  • Praesent euismod ac
  • Ut mollis pellentesque tortor
  • Nullam eu erat condimentum
  • Donec quis est ac felis
  • Orci varius natoque dolor
Yearly pricing
Monthly pricing

সুখ কোথায়?

SABBiRiF

১.
রাসেলের উত্তেজনায় ঘুম আসছে না! সে ক্লাস সেভেনে উঠবে আগামীকাল! মনে হয় পাশ করেই যাবে, পরীক্ষা খুব একটা খারাপ হয় নাই। তার স্কুলের বিশাল মাঠে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। স্কুলের নাম যশোর জিলা স্কুল, শহরের নামকরা বয়েজ স্কুল। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্ররা মাঠে সারি বেধে বসে থাকে, আর প্রধান শিক্ষক ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অধিকারীদের নাম ধরে ডেকে ফলাফল হাতে ধরিয়ে দেন। তারা আবার মাথা উঁচু করে, বুক ফুলায় ফলাফল নিতে যায়! সবাই হাততালি দেয়। অভিভাবকরা স্কুলের বাইরর রাস্তায় অপেক্ষা করে, মাইকে ঘোষণা হয় যেহেতু তাদের কানেও পৌছে। কোন এক অদ্ভুত কারণে ছাত্রদের চেয়ে সবসময় অভিভাবকদের মন খারাপ বেশী থাকে! রাসেল প্রতিবারই আশা করে থাকে এই বুঝি তার নাম ডাকলো, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই আশা পূরণ হয় নি। দেখা যাক আগামীকাল কি হয়! তবে খুব একটা আশা নেই। তিনজনের মধ্যে না থাকাও একদিক থেকে ভালো, তাহলে যারা সচারচর ১ম, ২য়, ৩য় হয় তাদের মায়েরা তার আম্মার কাছে জানতে চাবে তার ছেলে কোন নোট পড়ে! তার আম্মাজান বাসায় কাজ করে সংসার চালায়, এটা বলতে তার কোন লজ্জা নেই। কিন্তু তিনি এত সহজ-সরল যে এসব কিছুই বুঝবে না! সে অবশ্য কোন নোট পড়ে না, পড়ে পাঠ্য বই। স্কুলের বেতন এবার এক টাকা বাড়বে। গতবছর ছিল ছয় টাকা, এবার বেড়ে হবে সাত টাকা। টিফিনের টাকা মওকুফের জন্যে তার প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। গতবছর দিতে হয় নি, তখন তার বাবা ছিল। বাবা টিফিনের টাকা দিয়ে দিত। এই বছর বাবা নেই! না, মারা যায় নি, তার ছোট খালাকে বিয়ে করে চলে গেছে। আসলে আম্মা বাড়ী থেকে তাড়ায় দিছে। তার অবশ্য এতে কোন রাগ নেই। মা মাঝে মাঝে রাগারাগি করে, ছোট খালা সবসময় তাকে ভালোবাসতো। ছোট খালার জন্যে তার বরং এখন মন খারাপ হয়। আচ্ছা আবেদন পত্রে কি লেখা যায়?

তারিখঃ ২১.১২.১৯৯৫
আচ্ছা, ২১, ১২ এগুলোর পরে কি সংক্ষেপণ চিহ্ন (.) হবে না কি বিকল্প চিহ্ন (/) হবে? মনে হয় বিকল্প চিহ্ন হবে! কাউকে কি জিজ্ঞাসা করা যায়? দেখা গেল এক চিহ্নের কারণে তার আবেদনপত্র বাতিল হয়ে গেল! স্কুলের শিক্ষকরা এমনই, কেন যে তাদের অযথা রাগ হয়, কেন ছাত্রদের ধরে ধরে পেটায়, বোঝা মুশকিল!

বরাবর
প্রধান শিক্ষক
না কি মাননীয়? বইয়ের কিছু আবেদন পত্রে লেখা মাননীয়, কিছু আবেদন পত্রে বরাবর! তবে মাননীয় এর পরে হালকা থামতে হবে, সম্মান দেখানোর জন্যে থামা, মানে কমা আছে। বরাবরের পরে কোন কমা নেই! কি অদ্ভুত! আচ্ছা মাননীয়-ই থাক, যেহেতু টাকা মওকুফের ব্যপার বেশী সম্মান দেখানোই জরুরী।

এরপর আবেদন পত্রে কি লিখবে? “আশা করি ভালো আছেন?” না, এটা লেখা যাবে না। স্যার ভালো আছেন না খারাপ আছেন, শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী এটা তার জানার দরকার নেই। শিক্ষকরাও কখনও তাকে জিজ্ঞাসা করেন নাই, কেমন আছে সে? অথচ একজন শিক্ষকই কিন্তু তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু হওয়ার কথা ছিল!

“আমি রাসেল আহমেদ, রোল নংঃ ০৫, খ শাখা, সপ্তম শ্রেণী, যশোর জিলা স্কুলের একজন নিয়মিত ছাত্র”। স্কুলের নাম দেওয়ার কি প্রয়োজন কে জানে? সে কি বাইরের স্কুলের শিক্ষকের কাছে আবেদন পত্র লিখছে যে স্কুলের নাম লাগবে? না কি এই পত্র বাধাই করে দেওয়ালে টাঙানো হবে যেন পঞ্চাশ বছর পর যদি স্কুলের নাম পরিবর্তন হয় যায় তবে মানুষজন এসে বলতে পারে এই স্কুলের নাম যশোর জিলা স্কুল ছিল, এই তার প্রমাণ। সে নিয়মিত ছাত্র এই কথা ঠিক আছে। এই বছর তার একদিনও অনুপস্থিতি নেই।

“অতীব দুঃখের সাথে জানাইতেছি যে আমার বাবা আমার ছোট খালাজানকে নিয়ে পলায়ন করিয়াছিলেন, যদিও এতে আমার কোন প্রকার দুঃখ নেই! তবে কিছুদিন পর তিনি যখন ফিরিয়া আসিয়াছিলেন আমার আম্মাজান তার পশ্চাৎদেশে এমন লাথি মারিয়াছেন তাতে করিয়া তিনি সেই যে নিখোঁজ হইয়াছেন আর তাহার টিকিটা খুঁজে পাওয়া যায় নাই”!
“পরিশেষে জনাবের নিকট আমার আকুল আবেদন এই যে”… আচ্ছা আকুল মানে কি কুল কিনারা হীন? তবে এর চেয়ে বরং ভালো হতো দিক-বিদিক শূন্য আবেদন লিখতে পারলে, পত্রের গভীরতা বোঝা যেত.. “আমার বেতন এবং টিফিনের টাকা মওকুফ করে বাধিত করিবেন”।
“আপানার একান্ত বাধ্যগত ছাত্র
রাসেল আহমেদ”

এমনটা না যে টাকা মওকুফ না করলে সে বাধ্যগত থাকবে না। যাই হোক, এসব কথা আবেদন পত্রে লেখা যাবে না! কিন্তু এটাই আসল সত্য! সত্য কথার কোন ভাত এ দুনিয়াই নাই। ভাতের কথা মনে পড়তেই রাসেলের মনে পড়ে গেল কেন তার উত্তেজনায় ঘুম আসছে না! কাল সে স্কুল থেকে নতুন বই পাবে!

সারাবছর তার পড়াশুনা করতে অতটা ভালো না লাগলেও সে অধীর আগ্রহ নিয়ে নতুন বইয়ের অপেক্ষা করে। বই আসার সাথে সাথে সে বাংলা বইয়ের সব গল্প একটানে পড়ে ফেলে। তার গল্প পড়তে খুব ভালো লাগে, কিন্তু তাকে গল্পের বই কিনে দেওয়ার কেউ নেই! এ বছর স্কুলে আযান প্রতিযোগিতায় সে তৃতীয় স্থান অধিকার করায়, ঈদে-মিলাদুন্নবী এর অনুষ্ঠানে সে “কালো রাত তারার ফুল” নামে একটা বই উপহার পেয়েছিল! বইয়ের লেখক আসকার ইবনে শাইখ। বইয়ে মোটমাট গল্প তেরটি। ‘এক প্রিয় গুপ্তচর’ গল্পটি সে পড়া শুরু করেছিল নেহায়েত নাম দেখে, সে কিছুই বোঝে নি, দ্বিতীয়বার পড়েও কিছুই বোঝে নি। আর বইটা পড়া হয় নি, বড় হলে সে বরং পড়ে দেখবে। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রের জন্যে বইটা কতটা উপযোগী কে জানে! স্কুলে লাইব্রেরী আছে বটে একটা, কিন্তু সেখান থেকে কেউ কখনও বই ধার নেয় না। রাসেলের স্বপ্ন সে একসময় অনেক বড় গল্পকার হবে, তখন প্রকাশকরা এসে নিজে থেক তাকে সৌজন্য সংখ্যা দিয়ে যাবে, তাকে আর বই কিনে পড়তে হবে না। তার মা অবশ্য বলে গরীবদের স্বপ্ন দেখতে নেই। যাদের টাকা আছে তারাই খালি স্বপ্ন দেখার অধিকার রাখে! তবে তার ধারণা কথাটা ভুল। যাদের টাকা আছে তাদের স্বপ্ন দেখা লাগে না, যা ইচ্ছা তাই কিনতে পারে! এরকম মানুষের জীবন বরং অসুখী! কিন্তু একজন গরীবের যখন ছোট্ট একটা স্বপ্ন পূরণ হয়, সে ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।

বই পড়ার চেয়েও আরও একটা আনন্দের ব্যপার হলো নতুন বইয়ে মলাট লাগানো। সবাই বছর শেষে পুরানো ক্যালেন্ডার গুলো ফেলে দেয়, কিন্তু তার কাছে ক্যালেন্ডারের ঐ পাতা গুলোর প্রয়োজন অনেক বেশী! রাসেল বই বাঁধাই এর দোকানের সামনে অনেকদিন বসে থেকেছে, খেয়াল করে দেখেছে তারা কিভাবে বই বাঁধাই করে, আঠা কিভাবে বানায়, সেলাই করে কিভাবে! তবে এরা বইয়ে যে মলাট গুলো দেয় সেগুলো সাধারণত এক কালারের হয়, বেশীরভাগই লাল, নীল কিংবা গোলাপী! তবে আঠার কারণে বই হয় অনেক মজুবত। সে তার বইয়ের জন্য ভাত দিয়ে আঠা বানাবে। এমনিতেই চালের অনেক দাম, তাই সে রাতের খাবার থেকে কিছু ভাত বাঁচিয়ে রেখেছে; মাকে বুঝতে দেয় নি তা না হলে মা-ই না খেয়ে থাকতো। রাসেলের মাঝে মাঝে আবার ইচ্ছা করে বড় হয়ে সে খাতা-পত্র বাঁধাইয়ের দোকান দিবে। তবে সে সুন্দর সুন্দর মলাট দিয়ে বই বাঁধাই করে দিবে; সেখানে ফুলের ছবি থাকবে, থাকবে আকাশের ছবি, যেখানে মাঝ দরিয়ায় একটা পাল তোলা নৌকা স্থির হয়ে আছে!

আজ ভালোই ঠান্ডা পড়েছে, ডিসেম্বরের ঠান্ডা যেরকম হয়। রাসেলের একটু একটু ক্ষুধা লাগছে এখন, ঘুম না আসলে এই এক সমস্যা বার বার ক্ষুধা লাগে। আম্মা আগামীকাল কাজ থেকে আসার সময় পুরানো ক্যালেন্ডার নিয়ে আসবে। যে বাসায় কাজ করে সেই বাসার মালিককে আগেই বলা আছে। আসিফ বলেছে (রাসেলের বন্ধু) ঘুম না আসলে ভেড়া গুনতে, ১০০ থেকে শুরু করে নীচের দিকে! সে ভেড়া না দেখে কিভাবে গুনবে বুঝতে পারছে না, তবে আরেকটা সহজ উপায় আছে, আকাশের তারা গোনা। তার ফুটো টিনের চাল দিয়ে দিব্যি অনেক অনেক তারা দেখা যায়। বাচ্চূ ভাই মনে হয় “এক আকাশের তারা তুই একা গুনিস নে” গানটা তার কথা ভেবেই লিখেছেন!

২.
রাসেল ক্লাসে তৃতীয় হয়েছে। সবাই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়েছিল যখন সে ফলাফল আনতে গেল। আসিফ ও খুশিতে তার সাথে গেল। প্রধান শিক্ষক আসিফকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি আসছ কেন? আসিফ বললো, স্যার রাসেল একটা বিলাইয়ের বাচ্চা, রাতে পর্যন্ত ভূতের ভয়ে ঘুমাতে পারে না, এজন্য আমি সাহস দিতে আসছি। তবে ভূতের ভয়ের কথা সত্যি না, সে ভূতের ভয় পায় না। প্রধান শিক্ষক তৃতীয় স্থান অধিকারের জন্যে গল্পের বই উপহার দিলেন। রাসেল হাতে নিয়ে দেখলো, “কালো রাত তারার ফুল!” তার সব রাতই কালো সে জানে, তাই বলে এত কালো হতে হবে?

আসিফ বুদ্ধি দিল, চল স্কুলের সামনে মিনা বই ঘরে বইটা বিক্রি করে দিই। মিনা বইঘর একটা দারুন জায়গা, কত শত কমিক্সের এর বই পাওয়া যায়! তার পছন্দ চাচা চৌধুরীর বই, আর বিল্লু! সে প্রতিদিন স্কুল শেষে একটা বইয়ের দুই পাতা করে পড়ে আসে। বেশীরভাগ সময়ই বই শেষ করার আগে বিক্রি হয়ে যায়। মিনা বই ঘরের কালাম চাচা খুব বিরক্ত নিয়ে তাকালেও দুইটা কমিক্স দিলেন বিনিময়ে, সাথে দিলেন ভ্রমর আর সুতা ফ্রি! সুতার রঙ খুব অদ্ভুত, অনেকটা জেব্রার মত; লাল আর সাদা রঙের জেব্রা। কিরকম মজার ব্যপার হতো না যদি জেব্রা লাল সাদা হতো! তবে বই সেলাই করা খুব একটা সহজ কাজ না, খেয়াল রাখতে হয় গিট যেন বইয়ের উপরের দিকে না পড়ে। সব দিকে সমান ভাবে ভ্রমর দিয়ে ফুটা গুলো করা এবং শেষমেষ গিট দেওয়া খুব ঝক্কির ব্যপার। একটু এদিক ওদিক হলেই ঢিলা হয়ে যায় গিট, তখন সব শেষ, কেটে আবার নতুন করে শেলাই করো। সবশেষে আঠা দিয়ে উপরে মলাট লাগানো! আচ্ছা, আঠাটা এখনই বানায় রাখা দরকার। আম্মাজান নাই, এখই ভালো সময়; তা না হলে আবার জবাবদিহি করতে হবে কেন রাতে আধ পেটে ছিলাম!

রাসেল খাটের নিচ থেকে ভাতের থালাটা বের করে, ভক করে একটা গন্ধ লাগে তার নাকে! পচে গেছে বোধ হয়। আজ দুপুরেও আধ-পেটা খেয়ে থাকতে হবে, তবে নতুন বইয়ের কাছে এটা কিছুই না! গরীবের কাছে তুচ্ছ আনন্দই অনেক কিছু। টাকা থাকলে তো মানুষকে দিয়ে বই বাঁধাই করে নেওয়া যেত, তাতে সুখটা কোথায়?

SabbiRif এর সবগুলি গল্প পড়ুন এখানেঃ সাব্বিরিফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles