বৃষ্টির গন্ধ কেন এত সুন্দর?

অনেকদিন পর এক পশলা বৃষ্টিস্নাত ধরিত্রীর গন্ধের সাথে আসলে কোনোকিছুর তুলনা চলে না। প্রকৃতপক্ষে, বৃষ্টির ঘ্রাণ এতোই মনোরম যে সারা বিশ্বের সুগন্ধি প্রস্তুতকারক, সাবান প্রস্তুতকারক এবং ঘ্রাণ-পরিষ্কারকারীরা কৃত্রিমভাবে এই ঘ্রাণ উৎপাদনের চেষ্টা চালিয়েছে।

কতিপয় বিজ্ঞানীদের ধারণা, কিছু মানুষ বৃষ্টির ঘ্রাণের প্রতি তাদের যে অনুরাগ আসলে তা পেয়েছে তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে। এই পূর্বপুরুষেরা তাদের বেঁচে থাকার জন্য বৃষ্টির আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল ছিলো।

কিন্তু বৃষ্টির গন্ধ এত সুন্দর কি করে?

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বৃষ্টিপাতের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ঘ্রাণ রয়েছে যা লোকেরা আনন্দদায়ক বলে মনে করে।

এই গন্ধগুলির মধ্যে একটি, যাকে “পেট্রিকোর” বলা হয়, দীর্ঘ শুষ্ক আবহাওয়ার পরে বৃষ্টিপাত হলে এই ঘ্রাণ দীর্ঘস্থায়ী হয়। শব্দটি উপসর্গ “petr” এর সংমিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যার অর্থ পাথর কে নির্দেশ করে এবং “ichor” একটি ক্ষীণ সুগন্ধি নির্দেশ করে।

দুজন অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী ভেজা আবহাওয়ার গন্ধ নিয়ে গবেষণা করেছেন। দলটি ভারতে তাদের গবেষণা পরিচালনা করে। সেখানে বৃষ্টি পরবর্তী গন্ধ তখনই নির্গত হয় যখন শুষ্ক অঞ্চলের রুক্ষ মাটির উপর জলের ছিটা এসে পড়ে। পেট্রিকোর তৈরি তখনই হয়, যখন অ্যাক্টিনোমাইসেট নামে পরিচিত মাটিতে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপাদিত রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এই সুগন্ধযুক্ত যৌগগুলি যখন বৃষ্টি মাটিতে আঘাত করে তখন মনোরম পেট্রিকোর গন্ধ তৈরি করে।

বৃষ্টির আনন্দদায়ক ঘ্রাণের আরেকটি উৎস হতে পারে ঐ অঞ্চলের কোনো উদ্ভিদ। কিছু গাছপালা শুষ্ক সময়ে তেল নিঃসরণ করে এবং যখন বৃষ্টি হয়, তখন এই তেলের উদ্বায়ী অংশ বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। স্টিয়ারিক অ্যাসিড এবং পামিটিক অ্যাসিড সহ এই উদ্বায়ী ফ্যাটি অ্যাসিড, বৃষ্টির গন্ধে একটি আনন্দদায়ক অনুভূতি তৈরি করে, যেন আপনি এরোমেটিক সাবানে গোসল করছেন!

বৃষ্টির সাথে যুক্ত আরেকটি ঘ্রাণ হতে পারে ওজোন। বজ্রঝড়ের সময়, বিদ্যুৎ বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন অণুগুলিকে বিভক্ত করতে পারে, এবং তারা পালাক্রমে নাইট্রিক অক্সাইডে পুনরায় একত্রিত হতে পারে। এই পদার্থটি বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য রাসায়নিকের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে ওজোন তৈরি করে, যার তীক্ষ্ণ গন্ধ অনেকটাই ক্লোরিনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

বৃষ্টির গন্ধ আসলে যেখানে পড়ে সেখানের মাটি বা রাস্তা বা পতনের যায়গার উপর নির্ভর করে। যখন কেউ বলে যে, তারা যেন বৃষ্টির গন্ধ পাচ্ছে বৃষ্টি আসার আগেই, তখন এমন হতেও পারে যে, ঝড়ের আগমনী বাতাস মেঘ থেকে ওজোনকে নীচে নিয়ে গেছে এবং ব্যক্তির নাকে প্রবেশ করায় সে ঘ্রাণ পাচ্ছে।

সিরিজের পূর্ববর্তী লেখা দেখুন: মধ্যদুপুরেই পিঁপড়েদের আত্মহত্যা! কিন্তু কেন?

পরবর্তী হোয়াই ফ্যাক্ট দেখুন এখানেঃ শুধু রাতেই কেন চোখে পিঁচুটি জমে?

আমার সবগুলি লেখা দেখুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles