জার্মানির বিশেষজ্ঞরা ফাইবার অপটিক্স ব্যবহার করে 33 কিলোমিটার (20.5 মাইল) দূরত্বে থাকা পৃথক দুটি পরমাণুর মধ্যে কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট আবিষ্কার করেছেন। দ্রুত এবং নিরাপদ কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের পথে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক কারণ এর আগে এত দূরত্বে কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট (মিথস্ক্রিয়া) সম্ভব হয় নি। কিন্তু কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট কি?
কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট কি?
ধরুণ আপনি কোথাও যাচ্ছেন আর আপনার খুব খিদে পেলো। আপনি একটি ফাস্ট ফুড শপে একটা হটডগ আর একটা বার্গার অর্ডার করলেন। দোকানী আপনাকে একই রকম দুটি প্যাকেটে দুই খাবার দিলো। আপনি এখন র্যানডম্লি একটা প্যাকেট খুলে পেলেন হটডগ তাহলে অন্য প্যাকেট না খুলেই আপনি বলতে পারবেন এতে কি আছে। ব্যাপারটা কিছুটা এই রকম। এই অদ্ভুত ঘটনা তখনি ঘটে যখন দুটি কণা সাহিত্যের ভাষায় দুটি দেহ এক প্রাণ অবস্থায় পৌঁছে যায়, যেখানে একটির অবস্থা অন্যটিকে পরীক্ষা করেই বলে দিতে পারবেন পরীক্ষক, এটিই কোয়ান্টাম মিথস্ক্রিয়া নামে পরিচিত।
আরেকটু কঠিন করে বললে, একটি কণা তার তার সংগী কণাকে পরিবর্তন করতে পারে তা যত দূরেই থাকুক না কেন! এই ভৌতিক বা অস্বস্তিকর ঘটনার জন্যে আইন্সটাইন ও বিব্রত বোধ করেছিলেন কারণ তার মানে দাড়াচ্ছে তথ্য আলোর গতির চেয়েও দ্রুতগতিতে “টেলিপোর্ট” হচ্ছে!
সাম্প্রতিক আবিষ্কার
এটা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব প্রকৃতির শোনালেও, বহু বছর ধরে গবেষণায় কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট বারবার প্রদর্শিত হয়েছে। গবেষকরা এই অদ্ভুত গুণটিকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত ডেটা ট্রান্সমিট করেছেন অনেক দূরত্বে। সারল্যান্ড ইউনিভার্সিটি এবং লুডভিগ-ম্যাক্সিমিলিয়ানস-ইউনিভার্সিট্যাট মুনচেন (এলএমইউ) এর গবেষকরা সাম্প্রতিক গবেষণায় দুটি পরমাণুর মধ্যে এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে দূরত্বে কোয়ান্টাম মিথস্ক্রিয়ার রেকর্ড ভেঙেছেন। দুটি পৃথক এলএমইউ ভবনে গবেষকরা দুটি রুবিডিয়াম পরমাণুকে সফলভাবে কোয়ান্টাম মিথস্ক্রিয়ায় আবদ্ধ করতে অপটিক্যাল এন্ট্রাপমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। ফলস্বরূপ, মূল 700 মিটার (2,297 ফুট) কেবলটি আরও বেশি 33 কিলোমিটার (কিমি) পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছিল। পরমাণুগুলি তখন আলোক রশ্মি দ্বারা উত্তেজিত করা হয়, এবং ফোটন উৎসারিত করে।
ফোটনগুলি তখন একটি অপটিক্যাল ফাইবার তারের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় এবং অন্য প্রান্তে একত্রিত হয়। এই ফোটন গুলো তাদের উৎস এটমের সাথে কুয়াণ্টিফিকেশন এর দরুণ দারুণভাবে সম্পৃক্ততার ফলস্বরূপ, পরমাণু গুলি তখন কোয়ান্টাম মিথস্ক্রিয়ায় যুক্ত হয়। এটা তখন ই হয় ফোটনগুলি যখন যুগপত স্বত্বস্ফূর্তভাবে নির্গত হয়।
এই আবিষ্কার দুটি পরমাণুকে ফাইবার অপটিক্সের সাহায্যে আটকে ফেলার ক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক যা “কোয়ান্টাম মেমরি” নোড হিসাবে কাজ করতে পারে। তদ্ব্যতীত, মধ্যস্থতাকারী ফোটনের 780 ন্যানোমিটার (এনএম) প্রাকৃতিক ফ্রিকোয়েন্সি নির্দেশ করে যে তারা সাধারণত কয়েক কিলোমিটার পরে নষ্ট হয়ে যাবে, কিন্তু তাদের যাত্রা শুরু করার আগে, বিজ্ঞানীরা তাদের 1,517 এনএমে রূপান্তর করার জন্য একটি ডিভাইসের মাধ্যমে রেখেছিলেন। এটি করাতেই ফোটনগুলি ফাইবার বরাবর আরও দূরে ভ্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য ট্রান্সমিশন ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে কারণ এটি 1,550 এনএম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের খুব কাছাকাছি যা সাধারণত ডেটা ট্রান্সমিশনের জন্য ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সাথে ব্যবহৃত হয়।
সম্ভাবনাময় কোয়ান্টাম ইন্টারনেট?
গবেষকরা বলছেন যে এটি ব্যবহারিক কোয়ান্টাম ইন্টারনেট তৈরির ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি।
আমাদের গবেষণা দেখায় যে বিদ্যমান ফাইবার অপটিক অবকাঠামোগুলি ভবিষ্যতের যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলিকে সমর্থন করতে পারে যা বর্তমানে ব্যবহৃতগুলির তুলনায় দ্রুত এবং আরও নিরাপদ। স্যাটেলাইটগুলি, যেগুলি ইতিমধ্যে হাজার হাজার কিলোমিটারের মধ্যে আটকানো ফোটনগুলিকে সম্প্রচার করার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, এটির সাথে একত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।