পাল-কে-পাল-মানুষ-এর-মাথায় নিরালার মোড় মধ্যরাতেও গিজগিজ করে এখন
অথচ আমি কোন চেনা মুখ দেখিনা এখানে
চা-মামারাও পাল্টে গেছে
খুলনার ব্যবসায় বাণিজ্য কিন্তু খুব ভংগুর,
নদী ভাংগে না যদিও,
তবু বহুবার পাল্টায় এখানে দোকান-চৌহদ্দী,
জানেন? মানুষ প্রথাগত দোকানে মুরগির হাড় গলা দিয়ে বানানো পেটিস গিলবে
অথচ সুন্দর সাজানো রেস্তোরায় ফ্রাইড চিকেন বলেন কি ফুচকা, ও কোনোদিনো খুলনাবাসীর মন ভরাবে না।
ওদের নিউমার্কেটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই খেতে হবে, না হয় বসে বসে হাওড়া বেকারি। ব্যাস এইই!
যারা দাঁড়িয়ে গেছে গ্যাস্ট্রিক, স্যালাইন আর সেক্স পাওয়ার এর বড়ি বেচে ওরাই শুধু চিরচেনা গন্ধ বিলোয় মোড়ে।
উপরে নিচে ম্যানিকুইন এ ঠাসা শোরুম। কদ্দিন টেকে কে জানে!
গেলবার কাশেম মামার দোকানে আড্ডা দিলাম ঈদের পরদিন,
এবার শুনি মামা মরেছে ক্যান্সারে, আমার ধারণা গরীবেরা দ্রুত মরে ক্যান্সারে। গবেষণা কি হতে পারে এ নিয়ে? হয়তো পাত্তা দেয় না তাই।
মামার ছেলেটা হাল ধরেছে- দেখিনি আগে কখনো
খুব বেশি কথা হলো কই?
কাশেম মামার কথা বলতে গিয়ে শুন্যে হারালাম…
আচ্ছা? গরীব মানুষের দু:খ কি কম টেকসই? নাকি কম প্রকাশযোগ্য কেবল মৃত্যুদিন ছাড়া?
আব্বার চোখেও এমন শুন্যতা দেখেছি বছর দশেক আগে…
আব্বার সাথে শেষবার গিয়ে শুনি রেডরোজ টেইলার্সের মালিক কিছুদিন আগে গত হয়েছেন
আব্বা চিরচেনা স্টাইলে ঠোটে হাত দিয়ে শুন্যে হারালেন, শুধু বললেন আজ বিশ বছর এখানে আসি, জানলাম ই না…
আব্বাও হারিয়ে গেছেন। কত্ত শত লোক হারিয়ে গেছে এই চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে,
বনি ভাই, রাগী রাগী পারুল আপা, পাগলাটে অনিক, খেলার সাথী অন্তু, টোলপড়া সাগর- কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লার ভাইপো বলে যাকে খেলায় একস্ট্রা খাতির করিনি কোনোদিন।
আচ্ছা আমিও কি হারাবো শুন্যে একইভাবে?
খুব ইন্টারেস্টিং বিষয়, আব্বাকে কখনো ‘আপনি’ বলিনি, কবিতায় এসে বলছি দেখে নিজেই একটু থমকে গেলাম।
সে যাই হোক, খুলনা তে এখন কই তেমন আর কেউ থাকে না তো!
এ নেই, সে নেই, খুলনায় গেলে আমি বড্ড একা।
বাপ্পাটা আছে কিনা খোঁজ নেই নি অবশ্যি। হ্যাঁ বলতেই পারি ওউ তো খোঁজ ই নেয় না। ফেসবুকেও দেখি না। তবু ভালো থাকুক।
রাজীব ভাই নতুন বাবা হয়েছেন, আমার সাথে কিছুক্ষণ এর জন্যে বের হয়ে বাসামুখো হলেন। তাড়া ছিলো।
সবাই ব্যস্ত। স্মৃতি হাতড়ানোর মতো মানুষ কই?
সাড়ে দশটার মতো বাজে প্রায়। আব্বা থাকলে এতক্ষণে ফোনিয়ে বসায় ফেরাতো। নিজেই বাবা হয়েছি, শুধু তার কাছে আর বড় হওয়া হয় নি।
আলোয় এখনো ঝলমল করছে নিরালা মোড়।
তবু কি এক নি:সীম আঁধার আমার স্মৃতির ওলিগলি-দোকান পাট জুড়ে।
খুলনায় নেই, অথচ লিখছি যেন খুলনায় বসে, কবে যে আবার মনের উপর ট্যারিফ বসে যায় এই ভয় তো আছেই!
নাহ! ভাবছি আমিও সেই ঘুরে ফিরে প্রথাগত…
যাই হোক, মোদ্দা কথা কি জানেন? খুলনাতে এখন সত্যিই আমার পরিচিত তেমন কেউ থাকেনা।
হ্যাঁ আপনজনেরা আছে, মা আছেন (ওব্বাবা! মাকেও আপনি!)।
তবু আমার আমিকে সামনে বসিয়ে দুটো কথা বলে বসবার মতো কই তেমন আর কেউ তো থাকেনা!
(প্রিন্স মাহমুদের ডিলাক্সের ফালুদার পোস্ট দেখে কদিন ধরে মাথায় ঘুরছিলো, নামিয়ে ফেললাম)