গ্রাজুয়েশান হুড আর গাউন যেভাবে এলো!

পুরো আমেরিকা জুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। উপলক্ষ্য ক্লাস অফ ২০২৩ এর গ্রাজুয়েশান। পিছিয়ে নেই আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার্থে পাড়ি জমানো বাংলাদেশী গ্রাজুয়েটরাও। হুডিং গাউন আর ট্যাসেল পরে গ্রাজুয়েশান সেরেমনিতে অংশ নিতে কারো কারো দেশ থেকেও বাবা মা চলে এসেছেন। এত আনন্দের ভীড়ে অনেকেরই ফুরসৎ মেলেনা তাদের স্নাতক অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় অবধারিত একাডেমিক পোশাক সম্পর্কে খুব গভীরভাবে চিন্তা করার। মজার ব্যাপার হলো আজ সারা বিশ্বে যে পরিচিত গ্রাজুয়েশান পোশাক পরিধান করা হয় তা মূলত আরবি পোশাক থেকে এসেছে – থাব/থাওব থেকে!

এমাজন ডট কম থেকে নিচের থাব কিনতে আপনাকে ষাটটি ডলার খরচ করতে হবে।

 

কিন্তু কিভাবে এই ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে?

আজ মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে এই আরবীয় জ্ঞান চর্চার ঐতিহ্যকে জেনে বা না জেনে ধারণ করে চলেছে।
859 সালে একজন মুসলিম মহিলা, ফাতিমা এল-ফিহরিয়া দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়, আল-কারাউইয়ান বিশ্ববিদ্যালয়, মরক্কোর ফেজ বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি এবং আফ্রিকার প্রাচীনতম গ্রন্থাগার।
এটি বিশ্বের প্রাচীনতম কর্মরত বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার গৌরবও ধারণ করে।

আল-কারাউইয়ান ইউনিভার্সিটি প্রাথমিকভাবে ইসলামিক অধ্যয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেও ধীরে ধীরে গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল, দর্শন, ব্যাকরণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটির পাঠ্যক্রম প্রসারিত করে এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু ছিল।

আল-কারাউইয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে ইবনে রুশদ (আভেরিওস), হাসান আল-ওয়াজ্জান (লিও আফ্রিকানাস), ইহুদি দার্শনিক মূসা বিন মাইমন (মাইমোনাইডস), গারবার্ট দে অরিলাক (পোপ সিল্ভেস্টার নামে সর্বাধিক পরিচিত )

আল-কারাউইয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে দার্শনিক অ্যাভেরোসের লেখা ইসলামী আইনশাস্ত্রের একটি পাণ্ডুলিপি সহ বিখ্যাত পণ্ডিতদের দ্বারা লিখিত 4,000টি বই এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপির সংগ্রহ সহ অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার রয়েছে। মুসলিম বিশ্ব জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্রন্থাগারগুলির ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ হয়, লোকেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কেন্দ্রগুলি থেকে শেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ভ্রমণ করে। পরবর্তীতে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়টি মিশরের প্রাচীনতম ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে 10 শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়।

ইউরোপের ছাত্ররা যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে অধ্যয়ন করে স্নাতক হয়ে তাদের দেশে ফিরে যেত, তখন তারা মুসলিম পোশাক (থাব বা কামিস) পরিধান করত এবং এটি একটি ইঙ্গিত হয়ে উঠত যে এই বিশেষ ছাত্রটি মুসলমানদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হয়েছে।

আরব/মুসলিম পোশাক পরার এই অনুকরণ (যা ব্যাগি এবং ডিজাইনে প্রশস্ত) আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি মুসলমানদের দ্বারা নবম শতাব্দীতে, সালের্নো (ইতালি) শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি ছিল পূবের দিকে মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একধরনের সম্প্রসারণ। তারপরে টলেডো, সেভিল এবং গ্রানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলি প্রতিষ্ঠিত হয়। 1349 সালে গ্রানাডার মাদ্রাসা খোলা হয়েছিল।

বর্তমানে যে গ্রাজুয়েশান গাউনটি পরিধান করা হয় তা সাবফুস্ক নামে পরিচিত এবং ট্যাসেল সহ ফ্ল্যাট টুপিটিকে মর্টার বোর্ড বলা হয়।

জ্যাক গুডি তার “ইউরোপে ইসলাম” শিরোনামের বইতে বলেছেন যে “আরবি পোশাক (থাওব) আমাদের আজকের দিন পর্যন্ত শিক্ষাগত অখণ্ডতার সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং স্পষ্ট চিহ্ন হিসাবে রয়ে গেছে, বিশেষ করে বিতর্ক এবং স্নাতকের মতো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের সময়।”

এই কারণেই আজ যখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হই, তখন আমরা সাবফুস্ক নামে পরিচিত এই গাউনগুলি পরিধান করি যা থাবের মতোই।

‘মর্টার বোর্ডের’ পিছনের ট্যাসেলটি ছিল কুরআনের পৃষ্ঠাগুলি বুকমার্ক করার জন্য। আর ফ্ল্যাট ক্যাপ মূলত কুরআন হিফজ করার বা তখনকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধীত সাবজেক্টে পাণ্ডিত্য অর্জনের পরই মাথায় কুরআন রাখার জন্যে ব্যবহৃত হত। কালক্রমে যখন সাবফুস্ক পরিহিত ছাত্ররা তাদের মর্টার বোর্ড বহন করে, তখন আসলে ছাত্ররা কুরআন বহন করার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রাচীন সেই ঐতিহ্য কেই বহন করে- হুডিং আপনার মাথায় রাখার অধিকার শুধুমাত্র তখন ই আসে যখন আপনি স্নাতক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

ক্লাস অফ ২০২৩ এর জন্যে শুভ কামনা!

আমার অন্য লেখা দেখুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles