“এই লেখাটা এমনি এমনি লেখা হয়ে গেছে” এরকম একটা ইন্ট্রো দেওয়ার ইচ্ছা ছিল! না সেরকম কিছু হলো না! বলছিলাম ChatGpt (চ্যাটজিপিটি)’র কথা! মানুষের মুখে যা শুনলাম তাতে করে চ্যাটজিপিটিকে কেউ কেউ ভগবানের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন! না, না আসল ভগবান না; আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ভগবান! সেদিন ইউনিভার্সিটি থেকেও থেকে একটা ইমেল পেলাম চ্যাটজিপিটিকে এক্যাডেমিক কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হতে হবে আরও সতর্ক, নতুন নীতিমালা তৈরী হচ্ছে! কিছু কিছু ইউটিউব ভিডিও দেখলাম যারা দাবী করছে, চ্যাটজিপিটি গুগলকে রিপ্লেস করে ফেলবে কি? হায় হায়, গুগল তো এতদিন আমাদের ডাক্তার ছিল! একটা পেটে ব্যথা থেকে কিভাবে মানুষ মারা যেতে পারে তাও গুগল বলে দিতে পারতো! চ্যাটজিপিটির নিশ্চয় আরও ক্ষমতা তাহলে!
চ্যাটজিপিটি নিয়ে ইতোমধ্যে অনেক শুনে ফেলেছেন নিশ্চয়! আর ভালো লাগছে না সেই একই টপিক, তাই তো? আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি আজকের লেখা আপনি বাসায় জোরে জোরে পড়বেন, আপনার বাসার তেলাপোকা, ছারপোকা, ইঁদুর মারার জন্যে ঔষধ লাগবে না, তারা ঝাপাইয়া শুনবে হাফাইয়া (নট ধাপাইয়া) মরবে! যদি না মরে আপনার নাম ঠিকানা ইনবক্সে পাঠায় দিবেন, আমি নিজে আপনার বাসায় গিয়ে দেখে আসবো! অনেক ভূমিকা হলো, আজকের গবেষণা “চ্যাটজিপিটি বাংলায় কেমন”?
চ্যাটজিপিটি কে শব্দংশ-এ (syllable) ভাগ করলে দাঁড়ায় (চ্যাট+জিপিটি)। আমি অবশ্য “টি” কে “জিপি” থেকে আলাদা করে দিতে চাই, কারণ পরে ব্যখ্যা করছি!
“চ্যাট” বাংলায় অনেক আবেগপ্রবণ একটা শব্দ, এটার কোন আবিধানিক অর্থ নেই! সবাই ভাবে গালাগালি, আসলে এটা সাধারণ কোন শব্দ না বরং পুরো একটা অস্তিত্বের ভাবসম্প্রসারণ! এটা দিয়ে যদি আমি বাক্যগঠন করতে চাই বা কথার মারপ্যাঁচে ফেলতে চাই তাহলে হয় আমাকে স্টার মার্ক বসাতে হবে অথবা টুট-টুট শব্দ ছাড়া কিছুই শুনতে পাবেন না!
“জিপি” শব্দটা মাথায় ঢুকলে প্রথমেই কল সেন্টারে বসে থাকা সুন্দরী আপুদের কথা মনে হয়; যারা কথায় কথায় “স্যার” বলে এবং এই প্যাকেজ, সেই প্যাকেজ ধরায় দিতে চায়! পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান তাদের কাছে আছে, শুধুমাত্র কল বা নেটওয়ার্ক সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান ছাড়া! না, না অফেন্ডেড হওয়ার কিছু নেই, ভাইয়া গুলোও একই টাইপ! তবে তাদের সবকিছুতেই বিরক্তি! তাদের মুখে মধু অন্তরে বিষ! মুখে বলে স্যার, মনে মনে ডাকে ষাঁড়! না না আমি কোন “আহা, উহু টুনটুনি ষাঁড়কে” মিন করি নি! ধুর, আপনাদের ডার্টি মাইন্ড!
বাকী থাকলো, “টি”। টি কে আলাদা রাখালাম এর কারণ এর সাথে আমাদের সম্পর্ক বহুত দিনের! কোন বাঙালিকে জিজ্ঞেস করে দেখবেন “টি” বললে তাদের মাথায় আসে “চা”! উঠতে চা, বসতে চা, ঘুমাইতে চা! এমনকি একমাত্র বাঙালিরাই জানে “চা খেলে মানুষ কালো হয়ে যায়”! চা কে সারা পৃথিবীর মানুষই একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে! T2 নামে একটা চায়ের দোকান আছে, সেখানে আপনি পাবেন একশ’ ধরণের চা (১)! এই হলো চ্যাটজিপিটির বাংলা ইতিকথা! এখন দেখি এর বাংলা জ্ঞান কেমন?
গরুর রচনা ছোটবেলায় পড়েন নি এমন তো কাউকে পাওয়া যাবে না! তাই গরুর রচনা দিয়ে শুরু করা যাক! চ্যাটজিপিটি কে বললাম, “গরুর রচনা লিখ”।
এই রচনা দেখলে গরুও যে মন খারাপ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই! গরু বলবে কেউ আমাকে বিষ দে, না হলে আমি চ্যাটজিপিটির মায়ের বাপ উদ্ধার করে ছাড়ব! যাই হোক, এটা চ্যাটজিপিটির প্রথম প্রচেষ্টা; আমি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলাম, আপনাকেও তাই অনুরোধ করছি!
কেউ যাতে পরে অনুযোগ বা অভিযোগ না করে যে চ্যাটজিপিটিকে কিছু না শিখায় তার কাছ থেকে হুদাই আউটপুট চাইলে তো এরকম উত্তর দেওয়াই স্বাভাবিক, এজন্য ভাবলাম তাকে একটু লেখাপড়া শিখায় নিই! হাট্টিমাটিম টিম কবিতা (২) কি আমরা সবাই পড়েছি? না পড়ি নি, যেটা পড়েছি সেটা ছড়া!
“হাট্টিমাটিম টিম
তারা মাঠে পারে ডিম
তাদের খাড়া দুটো শিং
তারা হাট্টিমাটিম টিম”।
দেখি চ্যাটজিপিটি থেকে এবার যদি ভালো কিছু বের করা যায়!
এটা হচ্ছে শিখায় পড়ায় নেওয়ার নমুনা! মজা না?? তবে খারাপ হয় নি, “শাকসম্পতি” থেকে ভালো হয়েছে! অনেকটা ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল ধরণের!
রচনা হলো, ছড়া হলো, একটা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী লিখতে বললে কেমন হয়? আমি আসা করছি এমন একটা ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমের কাহিনী লিখে ফেলবে যেখানে নায়ক ছ্যাঁকা খাওয়ার পর জীবনে তরতর করে উন্নতি করবে! আমি ফিল্মমেকার হলে শুরুর সিনটা এরকম হতো –
অক্ষয় কুমার, আরে না বাংলা সিনেমায় অক্ষয় কুমার আসবে কোথা থেকে! বড় চাচা বেত নিয়ে বসে আছে ১৫-১৬ বছরের ছেলে-মেয়ে কান ধরে উঠবস করছে, বড় চাচার ডায়ালগ যাবে এখন,
“সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ প্রেম স্বাস্থ্যের জন্যে শুধু ক্ষতিকরই না, ধুমপানেরও কারণ! প্রেমে ধুমপান, ধুমপানে মৃত্যু! এই স্লো হয়ে যাচ্ছে কেন, এক কাজ কর, দুইজন দুইজনের কান ধরে আরো জোরে জোরে উঠবস কর”! দেখি চ্যাটজিপিটি কি করে!
গল্প ভুল লিখুক, ঠিক লিখুক, বাক্য গঠন হোক না হোক এতে আমার কোন আপত্তি নেই! যেটা নেই সেটা হচ্ছে আবেগ! এক ভরদুপুরে বকপোড়া হয়ে ইরফান যখন হন্তদন্ত হয়ে দিক-বিদিক উজাড় করে একটা অচেনা পৃথিবীকে আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছিল সেই আবেগটা নেই এখানে! আপনারা কি বলেন?
অনেক হলো, না? কি হাপিয়ে উঠেছেন? বন্ধুকে ঈদের দাওয়াত না দিয়ে শেষ করলে কেমন একটা দেখায় না? বন্ধুকে ঈদের দাওয়াত দিয়েই দিই কি বলেন?
এ পৃথিবী বরই স্বার্থপর, বন্ধু বন্ধুর বাসায় যাবে উপহার আসলো কোথা থেকে!
অনেক প্যাচাল পাড়লাম। আগে টিভিতে একটা অনুষ্ঠান হতো, নাম হচ্ছে প্যাচালি মদন! এখন অবশ্য মনে হয় না কেউ পোকা-বাক্সতে অনুষ্ঠান দেখে! আজ চ্যাটজিপিটির ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে চ্যাটজিপিটির বাংলা নাম হওয়া উচিত “প্যাচালি মদন”! তবে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে আর যাই হোক আপনি বোর হবেন না, বিশেষ করে বাংলায়! এ ও শুনলাম মাইক্রোসফট ওপেন এআই (চ্যাটজিপিটি) এ $১৪বিলিয়ন ইনভেস্ট করছে (৩), অথচ আমাদের কাছে কিন্তু একজন ইনবিল্ট “চ্যাটজিপিটি লিভিং লেজেন্ড” আছে, যিনি একাধারে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, গায়ক, পাইলট, কবি, সিনেমার নায়ক! ধুর, আপনাদের ডার্টি মাইন্ড! আমি সেই আবৃত্তিকারকের কথা বলছিলাম যিনি আবৃত্তি করেছেন
“এসো দন্য নগরীর দন্য দামাল
এসো আমায় নিয়ে
একসাথে আজ হাসি”
মিল পাচ্ছেন, নাকি পাচ্ছেন না? তো আজ এ পর্যন্তই! কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না বাসার ইঁদুর মরেছে কি না! ChatGpt কে দিয়ে আপনারাও মজার কিছু লিখিয়ে নিন! কিন্তু মাথায় রাখবেন, চ্যাটজিপিটির লেখা প্রেমপত্র ভুল করেও যেন প্রেমিকার কাছে না পৌছায়! আর যদি ভাবেন চ্যাটজিপিটি কে দিয়ে বিড়াল মারায় নিবেন, তাহলে চোখ বন্ধ করে মনের পুঞ্জিভূত সাহস এক করে আবেগপ্রবণ শব্দটাকে কাজে লাগান, অন্য কিছু কাজে আসবে না! কোন আবেগপ্রবণ শব্দ? ছিঃ, আপনাদের ডার্টি মাইন্ড!
সব কথার শেষ কথা, “গাড়ী খেয়ে মদ চালাবেন না আর চ্যাটজিপিটি কে দিয়ে বাংলা লেখাবেন না”!
Really fun to read! Carry on brother!!