ব্যাঙ কেন চামড়া দিয়ে শ্বাস নেয়?
ব্যাঙ ঢাকা শহর বাদে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই কম বেশি সহজলভ্য। এতটাই যে ব্যাঙের অনেক ব্যবচ্ছেদ করলেও এদের শ্বসন সম্পর্কে আমরা তেমন ওয়াকিবহাল নই। অনেক ব্যাঙই কিন্তু ত্বকের মাধ্যমে শ্বাস নেয়, এটা এমন একটি প্রক্রিয়া যাকে ত্বকের শ্বসন বলা হয়, যা তাদের ত্বকের মাধ্যমে সরাসরি অক্সিজেন শোষণ করতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড মুক্ত করতে দেয়।
কেন এই শ্বসন প্রক্রিয়া?
এর কারণ হল তাদের ত্বক পাতলা, আর্দ্র এবং অত্যন্ত শিরা উপশিরাযুক্ত, যার ফলে এর পৃষ্ঠের কাছাকাছি রক্তনালীগুলির একটি জালের মত নেটওয়ার্ক থাকে, ফলে সহজেই পাতলা ঝিল্লিযুক্ত ত্বক শ্বাসযন্ত্রের গ্যাসগুলিকে তার রক্তনালী এবং আশেপাশের মধ্যে সরাসরি ছড়িয়ে দেয়। সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত অবস্থায় ব্যাঙের সমস্ত শ্বাস-প্রশ্বাস ত্বকের মাধ্যমে সঞ্চালিত হয়।
এমনকি স্থলজ ব্যাঙগুলিও তাদের অক্সিজেন গ্রহণের পরিপূরক হিসেবে তাদের ফুসফুস ছাড়াও ত্বকের শ্বসন ব্যবহার করে। ব্যাঙ যখন জলের বাইরে থাকে, ত্বকের শ্লেষ্মা গ্রন্থিগুলি ব্যাঙকে আর্দ্র রাখে, যা বাতাস থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন শোষণ করতে সাহায্য করে।
ব্যাঙের এই শ্লেষ্মা সারাগায়ে সারাবছর থাকে বলেই বাঙালি বলে থাকে ব্যাঙের আবার সর্দি!
তাই বলে কি সব ব্যাঙ ই ত্বকের উপর নির্ভরশীল?
এটি লক্ষণীয় যে সমস্ত প্রজাতির ব্যাঙ তাদের ত্বকের মাধ্যমে একচেটিয়াভাবে শ্বাস নেয় না। কেউ কেউ তাদের ফুসফুসের উপর বেশি নির্ভর করে, আবার অন্যদের বিশেষ শ্বাসযন্ত্রের কাঠামো রয়েছে, যেমন ফুলকা শুধু ট্যাডপোলে পাওয়া যায় বা নির্দিষ্ট গাছের ব্যাঙের মধ্যে পাওয়া যায় ফুসফুসের মতো কাঠামো।
একটি ব্যাঙও তাদের নাকের ছিদ্র দিয়ে এবং তাদের ফুসফুসে বাতাস নিয়ে মানুষের মতো শ্বাস নিতে পারে। ফুসফুসে বাতাস নেওয়ার পদ্ধতি মানুষের তুলনায় সামান্য ভিন্ন। ব্যাঙের পাঁজর বা ডায়াফ্রাম নেই, যা মানুষের বুককে প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং এর ফলে ফুসফুসে চাপ কমিয়ে বাইরের বাতাস প্রবেশ করতে দেয়।
তাহলে ব্যাঙ মুখে কিভাবে শ্বাস নেয়?
ব্যাঙের ফুসফুস পুরোপুরি পরিপক্ক নয়। ব্যাঙ তার মুখের মধ্যে বাতাস টেনে আনার জন্য মুখের চোয়াল নিচু করে হা করে, যার ফলে গলা প্রসারিত হয়। তারপরে নাকের ছিদ্র খুলে যায় যাতে হা করা মুখে বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তখন নাকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং মুখের নিচের চোয়াল সংকোচনের মাধ্যমে মুখের বাতাস জোর করে ফুসফুসে প্রবেশ করে। ফুসফুসের কার্বন ডাই অক্সাইড নির্মূল করার জন্য মুখের চোয়াল নিচের দিকে চলে যায়, ফুসফুস থেকে বাতাস বের করে মুখের মধ্যে নিয়ে যায়। অবশেষে নাকের ছিদ্র খুলে যায় এবং মুখের চোয়াল উপরে উঠে নাকের ছিদ্র থেকে বাতাস বের করে দেয়।
তবে ব্যাঙের মুখের আস্তরণে একটি শ্বাসপ্রশ্বাসের পৃষ্ঠও থাকে যার উপর সহজেই গ্যাস বিনিময় হয়। বিশ্রামে থাকাকালীন, এই প্রক্রিয়াটি তাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান রূপ।
পর্ব-৬ দেখুনঃ শুধু রাতেই কেন চোখে পিঁচুটি জমে?