হেচকি

অফিসের সহকর্মী ভয়ানক শব্দে হেচকি তুলছেন। প্রতি বার মুখটা সামনের দিকে এনে উয়াক উয়াক স্বরে হেচকি তুলছেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললো “বইলেন না গ্যাসের সমস্যা । গ্যাস উপর দিকে উঠছে।“

আমি মনে মনে ভাবলাম গ্যাস যদি উপর দিকে না উঠে নীচের দিকে নামতো হেচকির ব্যাপারটা কি কুৎসিতই না হতো। ভাবতে গিয়ে হাসি পেয়ে গেলো ।
আমি হিহি করে হেসে দিলাম , সহকর্মী রেগে গেলেন “ আপনি হাসছেন কেনো? কি ব্যাপার??” আমি বিপদে পড়ে গেলাম। ৪৫/৫০ বছর বয়েসী মানুষ। ঠিক যে কারনে হাসছি তাকে তা বলা যায়না। বানিয়ে বললাম-“ ছোট বেলায় একবার বট গাছের নীচে গুয়ে পাড়া দিয়েছিলাম, প্রথমে ডান পা রেখেছিলাম, তারপর বাম পা। তাই ভেবে হাসছি। হি হি”। লোকটা অবাক হয়ে বললো “গুয়ে পাড়া দেবার মাঝে এতো হাসির কি পেলেন? আমার নাকেতো ভক কইরা গুয়ের গন্ধ এসে পড়লো। থু থু”।

থুথু করলেও হেচকি কমানো গেলোনা। ব্যান্ড বাজানোর মতো ছন্দ ময় করে হেচকি তুলছেন। হঠাৎ নাকে হাত চেপে ধরে এক গ্লাস পানি খেলেন তিনি । আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “নাক চেপে ধরে পানি খেলে হেচকি পানিতে ডুবে যায়। হেচকি সাতার জানেনা”। পানি খেয়ে কাজ হলোনা। হেচকি পানিতে ডুবে গেলোনা। সম্ভবত প্রেমের হেচকি। প্রেমের মরা জলে ডুবেনা, প্রেমের হেচকিও জলে ডূবেনা। “প্রেমের হেচকি” শব্দ টা মনে হতেই হাসি পেয়ে গেলো।( এই নামে কি কোন বাংলা ছবি হতে পারে? শাকিব খান-অপু বিশ্বাস! ছবির মাঝ খানে শাকিব খান গান ধরবে “তুমি যেই দিলা ভেচকী, শুরু হইলো প্রেমের হেচকী, উয়াও উয়াও উয়া…. )।

তিনি আবার খেপে বললেন “আপনি হাসছেন কেনো?” আমি আবারো মিথ্যে মিথ্যে বললাম “ছোট বেলায় একবারে এইডস উচ্চারন করতে গিয়ে ভুল করে আলাদা আলাদা ভাবে এই ডোস উচ্চারন করেছিলাম। বাংলা স্যার কান ধরিয়ে রেখেছিলেন। হি হি হিহি”
-আপনি এতো ছোট বেলার কথা ভাবেন কেনো বলেনতো?” আমি চুপ করে গেলাম। ভালো মুশকিলে পড়া গেলো। এতো হাসি আসছে কেনো?তবে মানুষটার হেচকি দেখে মনটা খারাপও হয়ে গেলো। কিছু করা দরকার।

একটা বুদ্ধি মাথা আসলো। হঠাৎ করে চমকে দিতে পারলে হেচকি থেমে যায় শুনেছি। লোকটার পিওনটাকে আড়ালে নিয়ে বললাম -“মাই নেম ইস শিলা, গানটা শুনেছেন। “
-অবশ্যই শুনেছি। এই গান টা একবার অন্তত না দেখলে বউ নিয়া ঘুমাইয়া আরাম পাইনা।বউরে রাত্রি বেলায় আমি শিলা বইলা ডাকি। মিস শিলা। হে হে!

-আজ এই গানটার সাথে নাচবেন । আপনার বসের সামনে। বসকে চমকে দিতে হবে। নইলে বসের অবস্থা আরো খারাপ হবে, হেচকি থামবেই না।বসরে বাঁচাতে হবে, বুঝেছেন।“

বসের জীবন রক্ষার্থে পিওন ছেলেটা দ্রুত ক্যাটরিনা হয়ে গেলো।সে মোবাইলে গান ছেড়ে চমৎকার ভাবে নাচ শুরু করলো। ক্যাটরিনার মতো করে লুঙ্গী হাটুর উপর পর্যন্ত তুলে নাচ। সহকর্মী হা হয়ে তাকিয়ে আছেন। হেচকি থেমে গেছে। আনন্দে আমার চোখে জল চলে আসলো। নিজেকে বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী লাগছে।

হঠাৎ শুনলাম আমার সহকর্মী ফিস ফিস করে বলছেন “ শ্বাস থেমে গেছে। শ্বাস থেমে গেছে। জানালা খুলে দে”। আমি পিওনের দিকে তাকিয়ে বললাম “ কি নাচ দেখাইলা। হেচকি তো হেচকি দম পর্যন্ত বন্ধ হইয়া গেছে চমকে গিয়ে।“ জানালা খুলে দেওয়া হলো। শ্বাস ফিরে এলো। স্বাভাবিক হবার পর সহকর্মী বললো “এইটা তো খুব ভালো জিনিস । আপনার ভাবিও মাঝে মাঝে হেচকি আক্রান্ত হয়। “শিলা চিকিৎসা” করা গেলে ভালো হয়”। আমি ভাবার চেষ্টা করছি। মধ্যবয়সী এই লোকটা বউয়ের সামনে লুঙ্গী উপরের দিকে তুলে নাচছে “ মাই নেম ইস শীলা…” প্রচন্ড হাসি পেয়ে গেলো।
সহকর্মী চেচিয়ে উঠলো- আপনি আবার হাসছেন কেনো?”
-ছোট বেলার কথা মনে করে। ছোট বেলায় একবার হয়েছে কি……

আমার অন্য লেখা পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles