লাখে একটি যে আবিষ্কার!
মধ্যযুগের মমি :
২০১১ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি – যদি সবচেয়ে বেশি নাও হয় , তবু অতি প্রাচীন ডাইনোসর জীবাশ্মগুলোর মধ্যে একটি উন্মোচন করেছিলেন – প্রায় সম্পূর্ণ একটি অ্যাঙ্কিলোসোরাস , এটির খাঁজকাটা সুক্ষ্ণ ভাঁজ , এর শরীরের বেশিরভাগ অংশ , প্রতিরক্ষামূলক আবরণ এবং এটির অন্ত্র এবং পেটের সম্পূর্ণ অংশসহ তারা এটিকে জনসম্মুখে নিয়ে আসেন । যদিও সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে রহস্যজনকভাবে সংরক্ষিত এটির মুখ এবং ত্বক।
রয়্যাল টাইরেল জাদুঘরের প্রযুক্তিবিদ মার্ক মিচেলের প্রায় ৭,০০০ ঘন্টা এবং প্রায় ছয় বছর লেগেছিল আশেপাশের পাথর থেকে সূক্ষ্মভাবে জীবাশ্মটি সতর্কতার সাথে বের করতে। তার এই প্রচেষ্টার প্রতি সম্মান দেখিয়ে, নোডোসরের আবিষ্কৃত নতুন প্রজাতি , যা আসলে এক ধরনের অ্যাঙ্কিলোসোরাস — এর নামকরণ করা হয় : বোরেএলোপেল্টা মার্কমিচেলি।
আর্স টেকনিকার সাথে একটি নতুন সাক্ষাৎকারে কার্যপ্রক্রিয়ার বর্ণ্না দিতে গিয়ে মিচেল বলেন , “প্রস্তুতির সময়গুলোতে , আমি একটি ধাঁধার মত ব্লকগুলোকে একত্রিত করেছিলাম এবং তখন প্রাণীটি সত্যিই তার আকার নিতে শুরু করে”
তিনি আরও বলেন , “ একবার ক্রিসমাসের ঠিক আগে , আমি এটির ঘাড় এবং মাথার উভয় পাশ একত্রিত করেছিলাম, এবং এটি সত্যিই প্রশংসার ব্যাপার যে এত দুর্দান্ত একটি প্রাণী একসময় পৃথিবীর বুকে বেঁচেছিল এবং এর নিজেকে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়াও ছিল অত্যন্ত আশ্চর্যজনক ।“
জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক, ডোনাল্ড হেন্ডারসন, আর্সকে বলেছিলেন, তিনি বাজি ধরেছিলেন যে এটি একটি আক্ষরিক অর্থেই “ লাখে একটি “ আবিষ্কার ।
শুরুর গল্প :
২০১৭ সালে মিচেল এটির প্রস্তুতি শেষ করার পর গবেষকরা অসাধারণ এই নমুনাটি তাদের হাতে পান এবং তারপর থেকেই তারা এর উপর বেশ কয়েকটি চমৎকার গবেষণা প্রকাশ করেন ।
রয়্যাল টাইরেলের তত্ত্বাবধায়কদের একজন, সালেব ব্রাউনের নেতৃত্বে এমনই একটি গবেষণায় অ্যাঙ্কিলোসরের হাড়ের গঠন যা অস্টিওডার্ম নামে পরিচিত , পরীক্ষা করা হয়েছিল যা অদ্ভতভাবে কম সংরক্ষিত নমুনাগুলোর মধ্যে পড়ে যায়। এগুলো তাদের স্বাভাবিক জায়গাতেই রয়ে যায় যদিও ব্রাউন তাদের ১৭২টিই লিপিবদ্ধ করে।
ব্রাউন আর্সকে বলেন , “অসংখ্য ডাইনোসরের কঙ্কাল বিচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে, অর্থাৎ তাদের হাড়গুলো সবই এলোমেলো অবস্থায় আছে। “ তিনি আরও যোগ করেন , “ এই নমুনা এবং অন্যান্য নমুনাগুলোতে অস্টিওডার্মের জীবনের প্রমাণ সংরক্ষিত থাকায় , অস্পষ্ট তথ্য থাকার পরও কিভাবে নমুনাগুলোকে পুনর্গঠন করা যায় তার সূত্র এটি আমাদেরকে দিতে পারে।“
এই গবেষণার প্রভাব কি ?
তার গবেষণার সবচেয়ে বড় প্রভাব ? এই পরামর্শ যে এটির খাঁজকাটা সুক্ষ্ণ ভাঁজগুলো আসলে শিকারীদের আটকানোর জন্য নয়, বরং তাদের সঙ্গীদের আকৃষ্ট করার জন্য ।“
ব্রাউন এবং তার সহকর্মীদের নেতৃত্বে এই নমুনাগুলোর উপর করা আরও একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে বোরিয়ালোপেল্টা , কাউন্টারশেডিং নামে পরিচিত একটি ছদ্মবেশ ব্যবহার করতো, যা এর আগে তার আকারের অর্থাৎ বড় প্রাণীদের প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়নি, । আর্সের তথ্য অনুযায়ী , এমন একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাবলয়ের মধ্যে থাকা ডাইনোসরকেও বেঁচে থাকার জন্য ছদ্মবেশ ব্যবহার করতে হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে ক্রিটেসিয়াস যুগ চিন্তার চেয়েও অনেক বেশী ভয়ঙ্কর ছিল।
এই মাসে প্রকাশিত সবচেয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা,বোরিয়ালোপেল্টার মতো ডাইনোসরদের খাদ্যের একটি অত্যন্ত বিরল চেহারা প্রস্তাব করে।
এখন যদি এর ভাগ্য পাথরেও লেখা হয়ে থাকে, বোরিয়ালোপেল্টা, ডাইনোসর জগতের প্রায় মহাজাগতিক এই প্রাণীর সাথে আমাদের বোঝাপড়ার সম্পর্ককে ক্রমাগত আকার দিয়ে চলেছে।