“রিও গ্যাস সফ্টওয়্যার” নামে একটি নতুন স্টার্টআপ বাংলাদেশে ফুয়েল সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টকে ডিজিটালাইজ করার জন্য যাত্রা শুরু করেছে। এটি বঙ্গবন্ধু ইনোভেসন গ্রান্ট ২০২৩ এর পুরস্কার প্রাপ্ত স্টার্টআপ। “রিও গ্যাস” এর চারটি ভিন্ন ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন এবং তিনটি প্যাকেজ মূল্য রয়েছে। অ্যাপ্লিকেশনগুলো হল ক) গ্যাস স্টেশন ম্যানেজমেন্ট সফ্টওয়্যার খ) পস অ্যাপ গ) গ্যাস স্টেশন লোকেটর ম্যাপ এবং ঘ) ইজিফুয়েল অ্যাপ। আর প্যাকেজগুলো হল ক) স্ট্যান্ডার্ড খ) প্রফেশনাল এবং গ) প্রিমিয়াম ৷
সম্প্রতি জনাব কলিমুল্লাহ (ছদ্ম নাম) তার একাধিক স্টেশন (২০ টিরও বেশি স্টেশন) পরিচালনার জন্য “রিও গ্যাস” সিস্টেমটি ব্যবহার করছেন। দিন শেষে তার গ্যাস স্টেশনের কর্মীরা স্মার্টফোন ব্যবহার করে প্রতিদিনের ক্রয়, বিক্রয়, ব্যাংক ডিপজিট, পেটি ক্যাশ এবং অন্যান্য ইনফর্মেশন সিস্টেমে ইনপুট দেয়। পরে প্রধান কার্যালয় থেকে সিনিয়র লেভেলের কর্মকর্তারা চেক ও অনুমোদন করলে জনাব কলিমুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে সমস্ত তথ্য অনলাইনে অথবা মোবাইল অ্যাপ এ দেখতে পারেন। যে কোন জায়গায় বসে কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে তিনি দৈনিক, মাসিক এবং বার্ষিক লাভ/ক্ষতি এবং অন্যান্য রিপোর্ট পেয়ে যান। সিস্টেমটি ব্যবহার করার আগে তার কর্মচারীদের দ্বারা এই রিপোর্টগুলো তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম এবং সময় লাগতো।
সিস্টেমটি ব্যাবহার এর পূর্বে কর্মচারীরা এই সমস্ত তথ্য কাগজে লিখে রাখতেন এবং সেখানে ভুল এবং প্রতারণামূলক কার্যকলাপ ছিল। এখন হিসাব খুবই নির্ভুল, ডিটেইল এবং স্বচ্ছ। গ্যাস স্টেশনের কর্মচারীদের দিনের শেষে সেলস মিটার রিডিংয়ের ছবি আপলোড করতে হয় এবং সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটা এন্ট্রির ভুল ধরতে পারে। সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্টক আপডেট করে এবং গ্যাস কেনার সতর্ক বার্তা দেয়। ফলে এখন সময়মত গ্যাস ক্রয় এর অর্ডার দেওয়া যায় এবং গ্যাস এর অভাবে এক দিনের জন্যও স্টেশন বন্ধ থাকে না। জনাব কলিমুল্লাহ এখন পূর্বের এক তৃতীয়াংশ কর্মচারীদের দ্বারা সবগুলো স্টেশন পরিচালনা করতে পারেন। এটি জনাব কলিমুল্লাহর অপারেশন খরচ অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, জনাব কলিমুল্লাহ খুব অল্প বিনিয়োগে এই সমস্ত দুর্দান্ত সুবিধাগুলি গ্রহণ করেছেন। সিস্টেমটি ব্যবহার করার জন্য, তাকে প্রাথমিকভাবে প্রতি স্টেশনে ১৫,০০০ টাকা দিতে হয়েছিল এবং প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক পস মেশিন কিনতে হয়েছিল। “রিও গাস” বাজার মূল্যে এই পস মেশিনগুলি সরবরাহ করেছিল, যা প্রতি মেশিনে ১৫,০০০ টাকা মাত্র। সেটআপ খরচ খুবই সাশ্রয়ী এবং এখানে অন্য কোন হিডেন খরচ নেই। এই সিস্টেমটি চালানোর জন্য তাকে কোন নতুন কম্পিউটার কিনতে বা নতুন কর্মচারী নিয়োগ করতে হয়নি, কারণ সিস্টেমটি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য এবং ব্যবহার করা খুবই সহজ। সিস্টেমের তথ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই ভালো। “রিও গাস” তার কর্মীদের বিনা খরচে প্রশিক্ষন দিয়েছে এবং ২৪/৭ যেকোন সমস্যার খুব দ্রুত সমাধান দেয়। “রিও গাস” কোম্পানিটি সিস্টেমটি ডেভ্লপ, নতুন নতুন ফিচার সংযোগ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে। কলিমুল্লাহ সাহেবের কোন মাথাব্যথা নেই। সিস্টেমের নিরাপত্তা এবং তথ্য গোপনীয়তা অত্যন্ত উচ্চমানের। জনাব কলিমুল্লাহ তার স্টেশনগুলির জন্য একটি পৃথক ডাটাবেস পান, ফলে অন্য কোম্পানির সাথে ডাটাবেস শেয়ার করতে হয় না। তিনি এই সমস্ত সুবিধাগুলি স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজ সাবস্ক্রিপ্সন করে পেয়েছিলেন যার মূল্য প্রতি মাসে প্রতি স্টেশনে মাত্র ৩০০০ টাকা।
জনাব কলিমুল্লাহর অনেক কর্পোরেট গ্রাহক ছিল যারা তার গ্যাস স্টেশন থেকে তাদের গাড়ির জন্য গ্যাস ক্রয় করতেন। কর্পোরেট গ্রাহকদের কাছে এলপিজি বিক্রি করা খুব সহজ কাজ ছিল না। কর্পোরেট গ্রাহকদের তথ্য, তাদের গাড়ি ও ড্রাইভারদের তথ্য, এবং কর্পোরেট গ্রাহকদের দ্বারা সমস্ত জ্বালানি ক্রয়ের রেকর্ড রাখার জন্য কিছু কর্মীকে নিযুক্ত করতে হয়েছিল। মাসের শেষে, তার কর্মচারীদের বিভিন্ন স্টেশন থেকে সেই জ্বালানি ক্রয়ের রেকর্ডগুলো দেখে গ্রাহকদের বিলিং ভাউচার তৈরি করতে হত। এতে তার কর্মচারীদের প্রচুর পরিশ্রম এবং সময় লাগত। প্রক্রিয়াটি ছিল ধীর এবং তাই গ্রাহকের বকেয়া পেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেত।
ক্রেডিট বিক্রয় ঝামেলামুক্ত ভাবে পরিচালনার জন্য “রিও গ্যাস” এর কর্পোরেট গ্রাহক ব্যবস্থাপনার একটি মডিউল রয়েছে। এছাড়াও “রিও গ্যাস” এর নিজস্ব ডাবল এন্ট্রি অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম রয়েছে যা সহজেই গ্যাস স্টেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সাথে ব্যাবহার করা যায়। জনাব কলিমুল্লাহ তাই কর্পোরেট গ্রাহকদের গাড়ি ও চালকের তথ্য এবং প্রতিটি বিক্রয় লেনদেন বিস্তারিত রাখতে “রিও গ্যাস” এর প্রফেশনাল প্যাকেজে আপগ্রেড করেন। ফলে প্রতিটি ক্রয়ের জন্য গ্রাহক এবং তাদের ড্রাইভারদের কাছে এসএমএস পাঠানো হয়। গ্রাহকরা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের ক্রয়ের বিস্তারিত তালিকাও দেখতে পারেন। প্রতি মাসের শুরুতে গ্রাহকরা সিস্টেমের দ্বারা অটো বিলিং ভাউচার পান, ফলে গ্রাহকের আস্থা এখন অনেক বেশি এবং তারা খুব দ্রুত বকেয়া পরিশোধ করতে পারেন। এই প্রফেশনাল প্যাকেজের মূল্য প্রতি মাসে ৪০০০ টাকা পার গ্যাস স্টেশন।
জনাব কলিমুল্লাহর কোম্পানি পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি ফ্লিট রয়েছে। কোম্পানিটি বড় হওয়ায় তার কাস্টমাইজড ফিচার তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। “রিও গ্যাস সফটওয়্যার” তার কোম্পানির জন্য কোনো আইটি বা সফ্টওয়্যার প্রকৌশলী নিয়োগ না করেই এই সব কাজ করে দেয়। এর জন্য তিনি প্রিমিয়াম প্যাকেজে আপগ্রেড করেছেন, যার মূল্য প্রতি স্টেশনে প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা মাত্র।