একটা পোস্টারের দুটো শব্দ দেখে খুব বিরক্ত হলাম – “সাম্প্রদায়িক পিশাচ”! এরপর আরো চোখে পড়লো এই বিষয়ক কিছু ফেসবুক বোদ্ধাদের পোস্ট, যারা কিনা মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সংস্কৃতির সাথে কিভাবে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত সেটা নিয়ে ফেসবুকে ঘৃণা ছড়িয়েছে! “ঘৃণা” একারণে বললাম কারণ তাদের মতে, সংস্কৃতি আগে, ধর্ম পরে! একটু গুগল করে যেটা পাওয়া গেল, তা হুবুহু তুলে দিলাম, “১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম আনন্দ শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ঐ বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে।
…শুরু থেকেই চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না…১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম লাভ করে।”
তার মানে এটা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ খুব বেশী দিন হয়নি! মুদ্রার আরেকপাশ দেখলে দেখা যাবে, কিছু মানুষের ঈমান নষ্ট হচ্ছে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার কারণে। সেটার কারণ বিশ্লেষণ করলে যেটা পাওয়া যায়, এটা নাকি মূর্তি পুজার সমতুল্য! সেটা কিভাবে হলো এটাও আমার বুঝে আসলো না! বিশালকায় চারুকর্ম পুতুল, হাতি, কুমীর, লক্ষ্মীপেঁচা, ঘোড়াসহ বিচিত্র মুখোশ এবং সাজসজ্জ্বা, বাদ্যযন্ত্র নিয়ে হাটাহাটি করা আর মূর্তিপূজা তো এক না! বরং মূর্তিপূজার সাথে এটাকে তুলনা করাই বরং যেসব ধর্মে মূর্তিপূজা হয় তাদের অবমাননার সমান!
অস্ট্রেলিয়ায় কাজের সুবাদে অনেক মানুষের সাথে মেশা হয়। রোযার মধ্যে এক সাইটে গেলাম, সাইট সুপারভাইজার নিরেট অজি অমুসলিম ভদ্রলোক, আমাকে দেখে বললো, সালাম! আমি উত্তর দিলাম। সে আমাকে রোযা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করলো, এটাও জিজ্ঞেস করলো, রোযা রেখে ক্যামেল বার্গার খাওয়া ম্যান্ডাটরি কি না! সিডনিতে আবার ক্যামেল বার্গার খাওয়ার খুব হিড়িক! ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই রোযার উৎসব নিয়ে ব্যস্ত! ইস্টারে আমাদের এখানে ৪দিন বন্ধ থাকে! এবার সিডনিতে ইস্টার এমনভাবে প্রোমোট করছে যেন ইস্টার মানুষ রোযা/ঈদ উৎসবের সাথে পালন করে! কি চমৎকার একটা ব্যপার!
কাবা শরীফে অনেকদিন পর্যন্ত মূর্তি রাখা হতো! নবূয়াত প্রাপ্তির পরপরই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানুষকে মূর্তি সরানোর জন্য বাধ্য করেননি, বরং মানুষকে শান্তির বার্তা পৌছিয়ে দিয়েছেন! এমনও না তার জীবদ্দশায় পুরো পৃথিবীর মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে বা পৃথিবীতে অন্য ধর্মের মানুষ আছে এটা তার অজ্ঞাত ছিল! যারা প্রকৃত মুমিন তাদের কাজ মানুষকে শান্তির বার্তা পৌছানো, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা না! এক কথায় ইসলামের দাওয়াত দেওয়া!
আসল কথা, এই রোযা বনাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ধর্মান্ধ এবং ধর্মহীন মানুষের লড়াই! দুঃখের বিষয় আমরা কেউই এই দুই দলের বাইরে না!! আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন, আমিন।।
আমার সবগুলি লেখা পড়ুন এখানেঃ সাব্বিরিফ