খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, একটি সাড়াজাগানিয়া গবেষণায় প্রকাশ হয়েছে যে,
একটি Ophiocordyceps গোত্রের পরজীবী ছত্রাক পিঁপড়াদের তাদের অন্তিম বিশ্রামের আগে মন এবং শরীর দখল করে নেয়ার ক্ষমতা রাখে।

এই পরজীবি ছত্রাক, যা ওফিওকর্ডিসেপসের একটি প্রজাতি যা থাইল্যান্ডের রেইন ফরেস্টে ছুতার পিঁপড়াদের মধ্যে পরজীবি আকারে বেঁচে থাকে এবং তাদের স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই আর তা হলো ছত্রাকের প্রজননে সহায়তা করা।

যেভাবে পিঁপড়াদের মৃত পাওয়া যায়

ছত্রাকটি পিঁপড়ার শরীরে ছড়িয়ে পড়ার পর পিঁপড়াটি শেষ পর্যন্ত মারা যাওয়ার আগে অস্বাভাবিক ভাবে আচরণ করতে শুরু করে এবং শেষমেষ পিপড়াটিকে এর চোয়াল দিয়ে একটি পাতার শিরা কামড়ে আটকে মরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এটা এমন একটা জায়গা যেটা ছত্রাকের বিকাশের জন্য নিখুঁত!

মধ্যদুপুরেই পিঁপড়েদের আত্মহত্যা! কিন্তু কেন? 1
একটি মৃত পিঁপড়া একটি পাতার নিচের শিরায় কামড় দিয়ে আটকে আছে। গবেষকরা প্রত্যক্ষ করেছেন মোট ১৬টি সংক্রামিত পিঁপড়া তাদের কলোনি ছেড়ে জঙ্গলের মেঝের কাছে একটি পাতায় কামড় দিয়ে মারা যাওয়ার আগে, সবগুলোই দুপুরের খুব কাছাকাছি সময়ে

গবেষকরা প্রত্যক্ষ করেছেন মোট ১৬ টি সংক্রামিত পিঁপড়া তাদের কলোনি ছেড়ে একটি পাতার নীচের শিরা কামড়ে মরে আছে – সবগুলোই দুপুরের খুব কাছাকাছি সময়ে। কিন্তু কেন?

সম্পূর্ণ ঘটনাটি খুবই ইন্টারেস্টিং কিন্তু আত্মহত্যার এই প্যাটার্ণ ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে আরেকটু রহস্যময় করে তুলেছে।

পিঁপড়াদের আত্মহত্যার প্যাটার্ণ

যদিও পিঁপড়ারা দুপুরের দিকে মরণকামড় দেয়, বাস্তবে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মরে না। সম্ভবত এই কৌশলটি নিশ্চিত করে যে ছত্রাক এর সামনে একটি দীর্ঘ শীতলতর রজনী বিদ্যমান যে সময়ে এটি আক্ষরিক অর্থেই পিঁপড়ার মাথা ফাটিয়ে স্পোর-ছড়িয়ে বৃদ্ধি শুরু করতে পারে।

সংক্রামিত পিঁপড়াদের ব্যবচ্ছেদ করে দেখা গিয়েছে যে যখন তারা তাদের জীবনের শেষ কাজটি করতে গিয়েছে অর্থাৎ একটি পাতার শিরায় মরণকামড় দিয়েছে, তখন তাদের মাথাটি ছত্রাকের কোষে ভরা ছিল, এইধরণের ইনফেকশান চোয়ালের গতিকে প্রভাবিত করে তাই কামড়ের পর আর মুখ খোলার মত অবস্থা থাকেনা।

মধ্যদুপুরেই পিঁপড়েদের আত্মহত্যা! কিন্তু কেন? 2
ছুতার পিঁপড়ার মাথা ছত্রাকের কোষে পূর্ণ হয়ে যায়, যা চোয়ালের গতিকে প্রভাবিত করে বলে মনে হয় তাই পাতায় আঁকড়ে থাকলে মুখ আবার খোলা যায় না।

আবার দেখা গিয়েছে যে পিঁপড়ারা ছত্রাক খাওয়ার কয়েকদিন পরে উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়, আর চিরাচরিত পথ অনুসরণ করে না এবং অন্যান্য পিঁপড়ার সাথে যোগাযোগ করে না এবং বনের ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ায়।
ছত্রাকের প্রজননের জন্য উপযুক্ত জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত তারা জঙ্গলের নিচের স্তরের ঠিক উপরে ঘুরে বেড়ায়।

এই স্তরে ঘুরাঘুরির কারণ এটি গাছের উঁচু স্তরের তুলনায় অনেক বেশি শীতল এবং আর্দ্র, এটি ছত্রাকের বিকাশের জন্য অনেক সহজ করে তোলে।
ছত্রাক শেষ পর্যন্ত মৃত পিঁপড়ার মাথা থেকে অঙ্কুরিত হয়, যার ফলে ছত্রাকের স্পোরগুলি সহজেই অন্য পিঁপড়েরা তুলে নিতে পারে এবং সম্পূর্ণ নতুন একটি চক্র শুরু হয়।

সিরিজের পূর্ববর্তী লেখা দেখুন: পানির বয়স কিভাবে সূর্যের চেয়ে বেশি?

আমার সবগুলি লেখা দেখুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here