মালিকি ইয়াওমিদ্দিন

SabbiRif

মঈন সাহেব নঈম নামে একজন কর্মচারী নিয়োগ করলেন। চাকরীর প্রথম দিন মঈন সাহেব নঈমকে ডাকলেন তার কর্তব্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য। মঈন সাহেব একটি সীমারেখা টেনে নঈমকে বললেন, তোমার কাজ হচ্ছে একটাই – এই সীমারেখা অতিক্রম না করা, তা না হলে শাস্তি পেতে হবে! খাবার-দাবার যথাসময়ে তোমার বাসায় পৌছে যাবে, থাকার জন্যে একটা ঘরও দেখিয়ে দিলেন, যা ইচ্ছে তাই করতে পারো, শুধু একটাই শর্ত!

নঈম খুব আনন্দে আছে, তার থাকা খাওয়ার কোন টেনশন নাই। দিন ভালোই কাটছে। একদিন এরকম হলো সে লাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এবং হোচট খেয়ে লাইনের অপর পাশে পড়ে গেল! নঈম খুবই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে দাড়ালো এবং খেয়াল করলো মঈন সাহেব দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হলো মঈন সাহেব ব্যপারটা মনে হয় খেয়াল করেন নাই!

পরেরদিন সে একইভাবে লাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ইচ্ছা করে লাইনের অপর পাশে পড়ে গেল। সেদিনও মঈন সাহেব দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু নঈমকে কিছু বললেন না! এরপর থেকে বেশ কিছুদিন নঈম দাগের একপাশে এক পা এবং অপরপাশে আরেক পা দিয়ে হাঁটতে থাকলো। সে খেয়াল করলো মঈন সাহেব ব্যপারটা নিয়ে মোটেই বিচলিত নন। বরং ইদানিং সে সপ্তাহে ভালো ভালো খাবার পাচ্ছে, নতুন জামা পাচ্ছে পরার জন্য এবং কিছুদিন আগে তার টিনের চাল ঝড়ে ভেঙে পড়েছিল, সেটাও ঠিক করে এখন তাকে পাকা দালান তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে নঈম দিনের অনেকটা সময় লাইনের অপরপাশে থেকে পার করে দিত, কারণ তার ধারণা হলো মঈন সাহেব ব্যপারটা নিয়ে তেমন একটা কনসার্ন না।

অনেকদিন পর মঈন সাহেব তাকে ডেকে পাঠালেন। জিজ্ঞাসা করলেন, কেমন আছ? নঈম উত্তরে জানালো সে খুব ভালো আছে, তার কোন সমস্যা হচ্ছে না। মঈন সাহেব তখন তাকে তার চাকুরীর শর্তের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সে বললো, সেটা মনে আছে কিন্তু এটা না মানার কারণে আমার তো কোন সমস্যা হচ্ছে না? এবং আপনিও তো আমাকে কখনই কিছু বলেন নি। উপরুন্ত দিন দিন আমার অবস্থার উন্নতি হয়েছে, নিশ্চয় আপনি আমাকে পছন্দ করেন বলে এরকমটা হয়েছে।

মঈন সাহেব তাকে বললেন, আমি হয়তো তোমাকে কিছুই বলি নাই বা সবসময় তোমার দেখভাল করেছি, কিন্তু তার মানে এই না যে আমি ব্যপারটা খেয়াল করি নি, যেটা তোমার কাজের অন্যতম শর্ত ছিল! বরং তুমি যতবার ইচ্ছা করে সীমারেখা অতিক্রম করেছ, ততবার আমি লিখে রেখেছি। সে হিসেবে তোমাকে আজ ২৫২৫ বার চাবুক পেটানো হবে।

সূরা ফাতিহা’র তিন নম্বর আয়াত –         مٰلِكِ يَوۡمِ الدِّيۡنِ

অর্থাৎ, বিচার দিবসের মালিক (Sovereign of the Day of Recompense) এটাই ব্যখ্যা করে, আমরা দুনিয়াতে আমাদের ইচ্ছামত যা খুশি করতে পারি, তাতে আল্লাহ-রাব্বুল-আলামীন বাধা নাও দিতে পারেন! এমনও না যে তিনি আমাদের সবকিছু থাকে বঞ্চিত করবেন, কিন্তু সব কিছুর হিসেব তিনি বিচার দিবসে নিবেন।

সূরা আল-ইনফিতার এ বলা হয়েছে,

وَمَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ ٭ ثُمَّ مَا أَدْرَاكَ مَا يَوْمُ الدِّينِ ٭ يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِنَفْسٍ شَيْئًا وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِلَّهِ

বিচারের দিনটি কি, তা কিসে আপনাকে জানাবে? আবার জিজ্ঞাসা করি, কিসে আপনাকে জানাবে বিচারের দিনটি কি? তাহা এমন একটি দিন, যে দিন কেউই নিজের রক্ষার জন্য কোনই সাহায্যকারী পাবে না, এবং সমগ্র ব্যাপার নিরঙ্কুশ ভাবে আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত হবে” [১৭-১৯]

আমরা অনেক সময় ভাবি, আল্লাহ আমাদের খুব ভালোবাসেন, রোযা না রাখলে, সামান্য হারাম খেলে বা সুদে লিপ্ত থাকলে আল্লাহ খুব একটা মন খারাপ করবেন না! হয়তো মাফ করে দিবেন। অবশ্যই মাফ করার এখতিয়ার শুধুমাত্র তারই, তারপরও আমাদের উচিত যেটুকু আমাদের নিষেধ করা হয়েছে সেটুকু না করা।

সর্বোপরি, আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, তিনি তিনি কেবল ‘রব্বুল আলামিন, আর-রহমান ও আর-রহিমই নন, তিনি “মালিকি ইয়াওমিদ্দিন”-ও। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা কেবল এই জীবনের লালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই এই বিরাট জগত-কারখানা স্থাপন করেন নি, এর একটি চূড়ান্ত পরিণতিও তিনি নির্ধারিত করেছেন।

অনিচ্ছা স্বত্তেও শয়তানের প্ররোচনায় আমাদের ভুল হতেই পারে, আমাদের উচিত সবসময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা শয়তান থেকে বেঁচে থাকার জন্য। বেশী বেশী ইস্তেগফার পড়া।

أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।

আল্লাহ আমাদের হেদায়েত দান করুন। রমজানের ওসিলায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমীন।

SabbiRif এর সবগুলি গল্প পড়ুন এখানেঃ সাব্বিরিফ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles