গুড়পুকুর মেলার ইতিবৃত্তান্ত
গুড়পুকুর নামটাই অদ্ভুত না? নামটা দেখলেই মনে আসতে পারে হয়তো গুড় এর সাথে কোন সম্পর্ক আছে। আপনি যদি এমনটাই ভেবে থাকেন তবে আমি বলব না আপনি একদমই ভুল ভাবছেন। যদিও ৩০০ বছর পার হতে হতে আসল ইতিহাসটা অনেকটাই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে লোকমুখে যা শোনা যায় এবং ঐতিহাসিকগণ যা বলেন তার উপর ভিত্তি করেই আজকের লেখা। প্রথমত বলতে চাই, গুড় সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আপনারা জানেন, তারপরও লেখকের দায়িত্ববোধ থেকে এটাকে পরিচিত করা আমার কাজ। গুড় হল ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকাতে খাওয়া একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। আখ, খেজুর এবং তাল গাছের রস ঘন করে গুড় তৈরি করা হয়। গুড় প্রধানত ৩ প্রকার; ঝোলাগুড়, পাটালিগুড়, চিটাগুড়।
এবার প্রসঙ্গ গুড়পুকুর মেলা।
গুরপুকুর মেলার অবস্থান
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা সাতক্ষীরা। এটি খুলনা বিভাগের একটি জেলা। অনেক ধরনের পৌরাণিকতায় সমৃদ্ধ এক জেলা। বঙ্গোপসাগরের আচল ঘেরা সুন্দরবন, সে বনের চোখ জুড়ানো চিত্রল হরিণ, বিশ্ববিখ্যাত ডোরা কাটা বাঘ, অসংখ্য মোঘল স্থাপত্য, জাহাজঘাটা, বনবিবি সব মিলিয়ে এ জেলা অন্য সব জেলা থেকে কিছুটা হলেও আলাদা। এ জেলার শুধু নয় দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলাটি বসে সাতক্ষীরা শহরেই, পলাশপোলে, গুড়পুকুরের পারে।
গুরপুকুরের নামের উদ্ভাবন কিভাবে হল
জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে মেলা সম্পর্কে বলা হয়, মেলার নাম গুড়পুকুর আর পুকুরের নাম গুড় । এই নামের জট এখনও খোলেনি। কিভাবে হলো এ নামকরণ-কেউ বলেন মনসা পূজার সময় পুকুরে বাতাসা ফেলা হতো। ওই বাতাসার জন্যে পুকুরের পানি মিষ্টি লাগতো। তখন থেকেই গুড়পুকুর। অনেকের ধারণা পুকুরে পানি থাকতো না বেশিদিন। স্বপ্ন দর্শনে জানা গেলো একশ ভাঁড় গুড় ঢালতে হবে পুকুরে। স্বপ্ন নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হলো। সেই যে পুকুরে পানি এলো আর শুকালো না।
আবার শোনা যায়, পুকুরের তলদেশ থেকে এক সময় মিষ্টি পানি উঠতো তাই এর নাম গুড়পুকুর হয়েছে। এমনও শোনা যায়, পুকুরের জায়গাতে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল, প্রচুর রস হতো ওই গাছে। একবার গাছের সমস্ত রস দিয়ে গুড় তৈরি করে তা বিক্রি করা হলো এবং ওই বিক্রিত টাকা দিয়ে পুকুরটি কাটা হলো। তখন থেকে গুড়পুকুর ।
ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য গুরপুকুর হতে পারে আদর্শ একটা দর্শনীয় স্থান
প্রতি বছর মনসা পূজার পর থেকে এই মেলা শুরু হয়। প্রথম দিকে এই মেলা শহরের পলাশপোলের বটবৃক্ষের (পুকুরের পাশেই) তলায় হত। কিন্তু আস্তে আস্তে এই মেলাটি কে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র আব্দুর রাজ্জাক পার্কে। এই মেলা একসময় অনেক বড় পরিসর এ আয়োজিত হত। মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচ, বাইস্কোপ ইত্যাদি হতো বলে শোনা যায়। কিন্তু আস্তে আস্তে সময়ের পরিসরে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
মেলার আয়োজন সমুহ
তবে এখনো যা বিলুপ্ত হয়নি তার ভেতরে আছে নাগরদোলা, নানান রকমের খাদ্য সামগ্রী, বিভিন্ন ধরনের দোলনা ইত্যাদি। মেলার ভিতরে প্রতিবছরই নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। নোয়াখালী, বরিশাল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম থেকে মানুষ এই সময় এখানে বেচাকেনা করতে আসে। এই মেলায় শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলার দ্রব্য এবং খেলনা পাওয়া যায় আবার মহিলাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চুড়ি ফিতা থাকে। এই সময়টাতে শহরের পরিবেশ একদম জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে। (চলবে)