মূসা (আঃ) তার পরিবারের কাছ থেকে পালিয়ে এসে একটা অচেনা জায়গায় গাছের নীচে বসে ছিলেন! এসময় তিনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, হে আল্লাহ আমি জানি আপনি আমাকে রক্ষা করবেন! এসময় দুইজন মেয়ে যাদের তিনি কুয়া থেকে পানি তুলতে সাহায্য করেছিলেন, তারা তার কাছে এলেন এবং বললেন আমাদের বাবা আপনাকে ডেকেছেন এবং তিনি তাদের বাসায় গেলেন! তাদের বাবা মূসা (আঃ) উপর খুশি হয়ে তাদের বাসায় বেশ কয়েক বছর কাজ করার শর্ত সাপেক্ষে তার এক মেয়ের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দিলেন!
দোয়া হচ্ছে বিশ্বাসীদের অস্ত্র! যখন কোনো কিছুই কাজ করে না, তখন একমাত্র দোয়া-ই কাজ করে!
যখন আপনার আর কোন পথ খোলা নেই, তখন একমাত্র দোয়া-ই আপনাকে পথ দেখাবে!
যখন আপনার আর কোন আশা নেই, তখন একমাত্র দোয়া-ই কাজ করে!
রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না অর্থাৎ দোয়া করে না আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত হন।’ (তিরমিজি : ৩২৯৫)
দোয়া করার জন্যে করা হলে সেই দোয়া কবুল হয় কি না আল্লাহ ভালো জানেন! দোয়া কবুল হওয়ার মধ্যে অন্যতম দুইটি শর্তঃ দোয়া মন থেকে করা এবং বিশ্বাস করা আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন!
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষের সামান্য ভালো দোয়াকে পরিপূর্ণ করে দিতে সবসময় প্রস্তুত থাকেন! আজকে একটা মজার হাদিস নিয়ে কথা বলা যাক। মজার একারণে বললাম, এই হাদিসের বর্ণনায় এসেছে আল্লাহ বান্দার সাথে কথোপকথনের সময় হেসে ফেলেছেন! আমরা যারা ইসলামকে কঠিন ধর্ম বলে সমালোচনা করি, তাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছু আছে!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :
সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, কখনো সে হাটবে, কখনো উপুড় হয়ে চলবে, কখনো আগুন তাকে ঝলসে দিবে। যখন এ পথ অতিক্রম করে সামনে চলে যাবে। তখন সে তার দিকে ফিরে বলবে,
বরকতময় সে আল্লাহ, যিনি আমাকে তোমার থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আল্লাহ আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা আগে-পরের কাউকে তিনি দান করেননি। অতঃপর তার জন্য একটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা হবে।
সে বলবে, হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, যাতে এর ছায়াতলে আশ্রয় নিতে পারি, এর পানি পান করতে পারি।
আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, আমি যদি তোমাকে এটা প্রদান করি, তুমি নিশ্চয় আরেকটি প্রার্থনা করবে।
সে বলবে : না, হে আমার রব। সে এর জন্য ওয়াদাও করবে।
আল্লাহ বার বার তার অপরাগতা গ্রহণ করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে যার উপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর আল্লাহ তার কাছে নিয়ে যাবেন, সে তার ছায়ায় আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে।
অতঃপর আগের চেয়ে উত্তম আরেকটি বৃক্ষ তার জন্য উম্মুক্ত করা হবে।
তখন সে বলবে : হে আমার রব! এ বৃক্ষের কাছে নিয়ে যাও, এর ছায়াতলে আশ্রয় নিব, এর পানি পান করব। এ ছাড়া আর কিছু প্রার্থনা করব না।
তখন আল্লাহ তাকে মনে করিয়ে দিবেন : হে বনি আদম, তুমি কি আমার সাথে ওয়াদা করনি যে, আর কিছু প্রার্থনা করবে না? এর কাছে যেতে দিলে তুমি আরো অন্য কিছু প্রার্থনা করবে।
অতঃপর সে প্রার্থনা না করার ওয়াদা করবে।
আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন, কারণ সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর তার ধৈর্যধারণ সম্ভব হবে না। অতঃপর তাকে সে গাছের নিকটবর্তী করা হবে। সে তার ছায়াতলে আশ্রয় নিবে, তার পানি পান করবে।
অতঃপর জান্নাতের দরজার নিকট আরেকটি বৃক্ষ উম্মুক্ত করা করা হবে, যা আগের দু’বৃক্ষ থেকেও উত্তম।
সে বলবে : হে আল্লাহ! এ বৃক্ষের নিকটবর্তী কর, আমি তার ছায়াতলে আশ্রয় নিব, তার পানি পান করব, আর কিছু প্রার্থনা করব না।
তিনি বলবেন : হে বনি আদম, তুমি আর কিছু প্রার্থনা না করার ওয়াদা করনি? সে বলবে, হ্যাঁ, তবে, এটাই শেষ, আর কিছু চাইব না।
আল্লাহ তার অপরাগতা কবুল করবেন। কারণ, সে এমন জিনিস দেখবে, যার ওপর ধৈর্যধারণ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। আল্লাহ তার নিকটবর্তী করবেন। যখন তার নিকটবর্তী হবে, তখন সে জান্নাতবাসীদের আওয়াজ শুনতে পাবে।
সে বলবে : হে আমার রব! আমাকে এতে প্রবেশ করাও।
আল্লাহ বলবেন : হে বনি আদম, তোমার চাওয়া আর শেষ হবে না। তোমাকে দুনিয়া এবং এর সাথে দুনিয়ার সমতুল্য আরো প্রদান করব, এতে কি তুমি সন্তুষ্ট হবে?
সে বলবে : হে আল্লাহ, তুমি দুজাহানের রব, তা সত্বেও তুমি আমার সাথে উপহাস করছ ! ?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ঘটনা বলতে বলতে হেসে দিলেন।
সাহাবারা তাকে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! কেন হাসছেন?
তিনি বললেন : আল্লাহর হাসি থেকে আমার হাসি চলে এসেছে। যখন সে বলবে : আপনি দু’জাহানের মালিক হওয়া সত্বেও আমার সাথে উপহাস করছেন? তখন আল্লাহ বলবেন : আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না; তবে কি, আমি যা-চাই তা-ই করতে পারি । আরো প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাকে বললেন : এটা চাও, ওটা চাও। যখন তার সব চাওয়া শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন : এ সব তোমাকে দেয়া হল এবং এর সাথে আরো দশগুন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : সে বলবে : আমাকে যা দেয়া হয়েছে, তার মত কাউকে দেয়া হয়নি।
( সহীহ মুসলিম ১৮৭ )
আল্লাহ আমাদের সকল ছোট এবং বড় গুনাহ মাফ করে দিক, আমীন।।