আর্কটিক ব্লাস্ট (Arctic Blast) হলো এমন একটি আবহাওয়াগত ঘটনা যেখানে আর্কটিক অঞ্চলের ঠাণ্ডা ও ঘন বায়ু দক্ষিণ দিকে নেমে আসে, বিশেষত মধ্য অক্ষাংশের অঞ্চলে। এটি সাধারণত তীব্র ঠাণ্ডা এবং শৈত্যপ্রবাহের কারণ হয়, যা শীতের সময়ে ঘটে। বিষয়টা আরেকটু ভালো ভাবে বুঝতে আরো দুটি টার্মের সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। প্রথমটি, পোলার ভর্টেক্স ও দ্বিতীয়টি পোলার জেট স্ট্রিম।

আর্কটিক পোলার ভর্টেক্স হলো শক্তিশালী পশ্চিমমুখী বাতাসের একটি বেল্ট বা ব্যাণ্ড, যা প্রতি শীতে উত্তর মেরুর উপরে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ৩০ মাইল উচ্চতায় গঠিত হয়। এই বাতাস একটি বৃহৎ অত্যন্ত ঠান্ডা বাতাসের পুলকে ঘিরে রাখে। এখানে উল্লেখ্য যে দক্ষিণ গোলার্ধের স্ট্রাটোস্ফিয়ারে আরও শক্তিশালী পোলার ভর্টেক্স রয়েছে। বাতাস যত বেশি শক্তিশালী হয়, এর ভেতরের বাতাস উষ্ণতর অক্ষাংশ থেকে তত বেশি বিচ্ছিন্ন থাকে, এবং তত বেশি ঠান্ডা হয়ে যায়।

NOAA-র স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বিশেষজ্ঞ অ্যামি বাটলারের মতে, মানুষ প্রায়শই পোলার ভর্টেক্সকে পোলার জেট স্ট্রিমের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে, কিন্তু এ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন স্তরের বায়ুমণ্ডলে অবস্থান করে। পোলার জেট স্ট্রিম ট্রপোস্ফিয়ারে ঘটে, যা ভূমি থেকে ৫-৯ মাইল উচ্চতায় থাকে। এটি ভূপৃষ্ঠের বায়ুস্তরের সীমানা চিহ্নিত করে, উষ্ণ মধ্য-অক্ষাংশীয় বায়ু এবং শীতল মেরু বায়ুর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। শীতকালে মধ্য-অক্ষাংশে আমাদের দৈনন্দিন আবহাওয়ায় বড় ভূমিকা পালন করে পোলার ভর্টেক্স নয়, বরং এই পোলার জেট স্ট্রিম।

যখন পোলার ভর্টেক্স বিশেষভাবে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হয়, তখন জেট স্ট্রিম উত্তর দিকে অবস্থান করে এবং কম বাঁক থাকে। এর ফলে শীতল বায়ু আর্কটিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে উষ্ণ থাকে। প্রতি দুই বছর বা এর কাছাকাছি সময়ে, আর্কটিক পোলার ভর্টেক্স নাটকীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কখনও কখনও পোলার জেট স্ট্রিম এই স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অস্থিরতার প্রতিফলন ঘটায়, যা দুর্বল বা ঢেউখেলানো হয়ে পড়ে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে শীতল বায়ু দক্ষিণে, মধ্য-অক্ষাংশ অঞ্চলে চলে আসে এবং উষ্ণ বায়ু আর্কটিকের দিকে উঠে যায়।


আর্কটিক ব্লাস্টের প্রভাব:

১) তাপমাত্রা খুব দ্রুত হ্রাস পায়, যা হিমাঙ্কের নিচে চলে যেতে পারে।

২) ঠাণ্ডা বাতাসের সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়, যা মানুষের শরীরের উপর তীব্র ঠাণ্ডার প্রভাব ফেলে।

৩) আর্কটিক ব্লাস্টের সময় তীব্র তুষারপাত ও বরফ জমা হতে পারে, যা পরিবহন এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

8) নিম্ন তাপমাত্রা হাইপোথারমিয়া ও শীতজনিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here