নাক ডাকা!

“নাক ডাকা”র ইংরেজি শব্দ কিছুতেই আমার মনে আসলো না। মনে পড়লোনা কথাটা সঠিক নয় , সঠিক হচ্ছে আমি কোনদিনই এটার ইংরেজি শব্দ শিখিনি। আমার ডাক্তার-ইন্ডিয়ান, তামিল। বাংলা, হিন্দি কিছুই জানেন না। অবশ্য হিন্দি জানলেও লাভ ছিলোনা। “নাক ডাকা” শব্দটির হিন্দি কি? তিনি ঘুমঘুম চোখে পরিস্কার ইংরেজিতে বললেন – “আর কোন সমস্যা?”

অনেক ভেবে আমি বললাম – “Nose running”
-হিস্টাসিন, এলাট্রোল…
-নোস কলিং… নোস স্পিকিং
-এরে বাবা তোমাদের নাক কথাও বলে নাকি?নাকের মুখ আছে? কন্ঠস্বর? ” তিনি অনেকটা ঘুমে ঢুলে পরে যাবার মতো করে বললেন।

আমি আর উপায় না পেয়ে ঘুমের অভিনয় করে, নাক ডেকে দেখালাম “ঘরর ঘর…ঘরর ঘর…” অবাক হয়ে শুনলাম ডাক্তার সাহেবও ডাকছেন “ঘরর ঘর…ঘরর ঘর…” আরে এই লোক দেখি ঘুমিয়ে গেছে। আমি ডাকতে যাচ্ছিলাম। উনার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছুটে এলেন।
-স্যারের সেলফ আইসোলেশন চলছে এখন। ডাকবেন না। ১ থেকে ১২০ পর্যন্ত গুনতে থাকুন। জেগে যাবেন।“
আমি গুনতে শুরু করলাম -১২৩৪৫…
-আরে ভাই ধীরে। অন্তত তিন ফুট দূরে দূরে গিয়ে গুনুন। আমি আবার গোনা শুরু করলাম।
“১…২…৩…৪…৫…” গুনতে গুনতে গুগল চেপে নাক ডাকার ইংরেজিও বের করে নিলাম।
১১৯ পর্যন্ত যেতেই উনি জেগে উঠলেন। বললেন-
-হ্যা কি জানি আপনার সমস্যা। নাক দিয়ে কোভিড ১৯ ঢুকে গেছে? আপনাকে কে ঢুকতে দিলো ? সিকুঊরিটি…
-না না শুনুন । আমার সমস্যা হচ্ছে “Snoring”…snore…
-এটার মানে কি? দাড়ান গুগল করে দেখি…তামিল অর্থ কি আছে…”

উনি মোবাইল হাতালেন, দেখলেন। তারপর বিষন্ন মনে ঘরে হাটতে শুরু করলেন।
-আমার তিন তিনটি বউ…
-কি ভাগ্য আপনার মশাই…
-চলে গেছে আমাকে রেখে…হ্যা হ্যা হ্যা…চলে গেছে
-আহারে! তো চার নাম্বারটা করছেন না কেন?
-দশ দশটি বাড়ি…
-বড়লোক বটে আপনি
-চেঞ্জ করতে হয়েছে…বাড়ীওয়ালা বের করে দিয়েছেন…
-কি নিষ্ঠুর…রে বাবা…
-৩০ টা চাকর বাকর…
-এতো গুলো?
-কেউ থাকেনি…” চোখ মুখ কঠোর করে বললেন-
-কি কারণে জানেন?
-জি না। কি কারণ?“ এবার উনি গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন…।
-শুধু মাত্র…শুধু মাত্র…এই ফাকিং নাক ডাকার কারণে। আমার জীবন টা এলো মেলো করে শুন্য করে দিয়েছে…কতদিন ভেবেছি নাকটাই কেটে ফেলবো…জাস্ট মুখ দিয়ে শ্বাস নিলে খেতে পারিনা বলে…রেখে দিয়েছি…আর আপনি এসেছেন নাক ডাকার চিকিৎসা করাতে…আপনি কি অদ্ভুত? অমানবিক…

মানুষটির গলা আছে বটে। আমি তিনতলা থেকে নীচ তলা দৌড়ে নেমেও শুনলাম। তার গলা শোনা যাচ্ছে। তিনি “অমানবিক” “অমানবিক” “ফাকিং অমানবিক” বলেই যাচ্ছেন। একদম যখন মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে যাবো শুনলাম তিনি বলছেন “ তবে শুনুন যদি কোন মায়াবতী রমণী পান যে কিনা নাক ডাকা সইতে পারে তো আমাকে…

আমি পথে নেমে এসেছি। সেই রকম মায়াবতী রমণী একজনই আছে। আর  দুর্ভাগ্য অথবা সৌভাগ্যবশত সে আমারই ঘরণী।

আমার অন্য লেখা পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles