রামাদান মুবারাক!
বিরাট কনফিউশনের মধ্যে আছি! এখানের চাঁদ দেখে রোযা রাখবো, নাকি সৌদি আরবে চাঁদ উঠেছে সেটা জেনে রোযা রাখবো, না কি স্যাটেলাইট এর ড্যাটা দেখে চাঁদের হাল হকিকত জেনে রোযা রাখবো!
অথচ এরকম উদ্ভট প্রশ্নের সম্মুখীন ছোটবেলায় কখনই হতে হয়নি, হ্যা সেই বিখ্যাত একবার ছাড়া! যেবার ঘোষণা এসেইছিলো রাত দশটার ইংরেজি সংবাদের পরের ইত্যাদির মতো! এছাড়া সবসময় হই-হুল্লোড় করে ছাদে গিয়ে দেখেছি চাঁদ উঠছে কি না, খালি চোখে সুবিধা করতে না পারলে বিটিভি’র ঘোষণা শোনার জন্য বসে থেকেছি! তখন আবার বিটিভি কে বিশ্বাস করা যেত, উন্নয়নের বাম্পার ফলনে আমাদের দেশ রাষ্ট্র সমাজ তখনো ভেসে যায়নি, তখনো ভাইরাল হবার জন্যে উদোম নৃত্য শুরু হয়নি। বরং উপস্থাপিকার মাথায় কাপড় থাকলে রোযা শুরু, আর কাপড় না থাকলে ঈদের শুরু এই যে ব্যাপারটা সবাই কেলিয়ে কেলিয়েই বুঝে নিতো!
যত বিপত্তি দেখছি অস্ট্রেলিয়াতে এসে। আমি একটা দিন দেখে রোযা শুরু করি তো আমার প্রতিবেশী আরেকদিন! এই মসজিদে এইদিন ঈদের জামাত হয়, তো আরেক মসজিদে আরেকদিন! যাই হোক, কয়েকটা হাদিস শেয়ার করি, বিচার বিবেচনা হররোজের পাঠকদের কাছে!
চাঁদ দেখে রোজা শুরু চাঁদ দেখে শেষ
#১ হাদিস শরীফের ভাষ্য, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখে রোজা শেষ করবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, একজন গ্রাম্য সজ্জন ব্যক্তি রাসুলের (সা.) কাছে আরজ করলেন— আমি রমজানের চাঁদ দেখেছি। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই? লোকটি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য প্রদান কর যে, মোহাম্মদ আল্লাহর রাসুল? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) অতঃপর হজরত বেলালকে (রা.) লক্ষ্য করে বললেন, হে বেলাল! মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামীকাল রোজা রাখে। (আবু দাউদ, হাদিস নং-২৩৪০)
মাহে রমজানের রোজা শুরু করার জন্যও রয়েছে শরিয়তের সুস্পষ্ট বিধান।
#২ হযরত কুরায়ব (রঃ) থেকে বর্ণিত, ‘উম্মুল ফযল বিনতে হারিস তাকে সিরিয়ায় হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট পাঠালেন। (কুরায়ব বলেন) আমি সিরিয়ায় পৌঁছলাম এবং তার প্রয়োজনীয় কাজটি সমাধা করে নিলাম। আমি সিরিয়া থাকা অবস্থাই রমজানের চাঁদ দেখা গেল। জুমআর দিন সন্ধ্যায় আমি চাঁদ দেখলাম। এরপর রমজানের শেষভাগে আমি মদীনায় ফিরলাম। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমার নিকট জিজ্ঞেস করলেন এবং চাঁদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোন দিন চাঁদ দেখেছ? আমি বললাম, আমরা তো জুমআর দিন সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নিজে দেখেছো কি? আমি বললাম হ্যাঁ আমি দেখেছি এবং লোকেরাও দেখেছে। তারা সিয়াম পালন করেছে এবং মুআবিয়া (রাঃ) সিয়াম পালন করেছেন।’
তিনি বললেন, ‘আমরা কিন্তু শনিবার সন্ধায় চাঁদ দেখেছি। আমরা সিয়াম পালন করতে থাকবো, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ দিন পূর্ণ করবো অথবা চাঁদ দেখব। আমি বললাম, মুআবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখা এবং তার সওম পালন করা আপনার জন্য যথেষ্ট নয় কি?’ তিনি বললেন, ‘না, যথেষ্ট নয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সা. আমাদেরকে এরূপ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম, ইফা ৩/২১ হাদীস নং ২৩৯৯)
#৩ আরেকটি হাদীসে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রেখো এবং চাঁদ দেখে রোজার মাসের সমাপ্তি কর। আর যদি মেঘের আড়ালের কারণে চাঁদ দেখা না যায়, শাবান মাসের ত্রিশ দিন পূর্ণ করো।’ (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
#৪ সহীহ মুসলিমের একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে, ‘যদি তোমাদের উপর মেঘ ছেয়ে যায় তাহলে ত্রিশ দিন রোজা রাখো।’ (রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৫৯ হাদীস নং ১২২১)
#৫ অন্য একটি হাদিসে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের আগে রোজা রেখো না, বরং চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে শেষ করো। যদি তোমাদের ও চাঁদের মাঝখানে মেঘ প্রতিবন্ধক হয়ে যায় তাহলে ত্রিশ দিন পূর্ণ করো।’ (তিরমিযী, রিয়াদুস সালেহীন ৩/১৬১ হাদীস নং ১২২৫)
আসল কথা, আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, কিন্তু তার কথা বা নবীর সুন্নাহ্ মেনে চলতে আমাদের কষ্ট হয়; নিজের যেটা সুবিধা সেই অনুযায়ী ইসলাম পালন করি! আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন, আমিন।।