আছি, এলোমেলো বেঁচে থাকায়… ।।
রেজওয়ান তানিম
এক.
ঘিরে থাকে কত না বলা অন্ধকার, অগুনতি স্মৃতির আকাশগঙ্গা—বলে না যাপন।
প্রতিজন্মে কবর দেই পুরনো অসুখ, নতুন করে তারা বাসা বাঁধে ক্ষয়িষ্ণু অণুচক্রিকায়! কোন জন্মপাপ আমার কফি ঠোঁটে কালি গুলে দ্যায়—আমাকে বলো, বলো হে প্রিয়তমা কবিতা…
হায় কবিতা,
তুমি কি আমাকে বিষ দিতে পারো; যা মৃত্যু দেবে না কখনো, অথচ মৃত্যুর যন্ত্রণা দেবে!
গত বোশাখের উৎকট আনন্দে যে আলোরোদ ছিল, তাকে আমি ভুলে যাব নিজস্ব নিয়মে। আর তখন পুরনো গীটারে আঙুল চালাবো, বিকট চিৎকারে গাইতে থাকবো—‘ও গানওয়ালা, আরেকটা গান গাও!’
হা হা হা, কেমন বেসুরো আমার সুমন, চিড়ে চলে যাবে এই রাত—
আর তার বিবশ আঁধার!
দুই.
ঠিক এই রকম অন্ধকার!
এমন এক রাতে আমি নক্ষত্র দেখেছি, পাহাড়ের খাঁজে নিরুত্তাপ শুয়ে থাকা হ্রদের কাছে। যাবতীয় কৃত্রিম, সাঁঝবাতির থেকে অনেকটা দূরে নিজেকে খুঁজে নিচ্ছি নিজস্ব শুন্যতায়।
ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে তারারা জ্বালছিলো আলোর ফুটকি। তার দিকে চেয়ে থাকি অপলক, নিজেকে আবিষ্কার করি অদ্ভুত শুন্যতায়! ঘাসের চাদরে শুয়ে পাশাপাশি, কবিতার সাথে আলো দেখা হয়না কখনো।
আমাকে নি:সঙ্গ দেখতেই ভালবাসে জোনাকি, করুণা করে কাছে এসে, দ্যাখায় যুগলপ্রেমের উল্লাস! আলো দেবার ছলে ওর অশ্লীলতাটুকু আমি টের পাই। হয়ত, না না একদম নিশ্চিত করেই আমার চারপাশে ঘুরে বেড়ায় আপাত আপেক্ষিক অন্ধকার, ব্যস্ত রাত আর তার নিষ্ঠুর নীরবতা!
অবশ্য ওতে কিছু মনে করি না আজকাল, ওরা না থাকলেই ইদানীং কেমন কেমন যেন লাগে। মনে হয় কেউ তো আমাকে চাইছে, এইভাবে…
তিন.
যাপনের ইতিহাস আমার, আশ্রয় নিয়েছে বালির গর্ভে—
সেও বহুকাল…
একলা থাকার অসুখেও আজকাল বড়সড় ভ্যাজাল; নির্জনতার হিম সমুদ্রে, অন্তহীন কোলাহলের অশ্লীলতা।
সময় শিখিয়েছে বলে জানি, পতঙ্গের পিঙ্গল পদে লিখে রাখে কেউ কেউ জীবনের পথ!
পার্কের বেঞ্চিতে শুয়ে মনে হয়, বেঁচে থাকা অনেক ব্যয়বহুল।
আর ভাল লাগছে না এইসব লৌকিকতা, বেঁচে থাকা নামের এই কুৎসিত বাস্তবতার বিবিধ বিধি।
নিজেকে প্রদর্শন ও বিক্রির নিখুঁত এই আয়োজনে আমি অভিনয় করে যাওয়া চাবি আঁটা পুতুল মাত্র। শিখিয়ে দেয়া সুরে নেচে গেয়ে ঘরে ফিরি সময় হলে।
আজকাল তাই বারবার মনে হয়—মরে গেলেই ভালো হত। কী এক সুমহান অন্ধকারে ডুবে যেত আমার চৈতন্য!
চার.
মরে গেলেই ভালো হত না, হবে…
বিষয়টা ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যৎ কালের হাতেই ছেড়ে দেয়া। তবে এটা তো সত্যি একশ শতাংশ; আজকাল কিছু আর ভাল লাগে না, ইচ্ছে করে মরে যাই।
মরে গেলেও কি শান্তি পাওয়া যাবে? চির বিদায় স্টোরের নানাবিধ উপকরণে হবে আমার লাশসজ্জা!
হয়ত, সমাজ প্রশ্ন তুলবে দাফন কাফনের, হুজুর ডেকে কোরান খতম বা মিলাদের; বিচ্ছিরি সব হ্যাপা নিকটজনের। আর চল্লিশা নামে অদ্ভুত অশ্লীলতায় মৃত্যু উৎযাপন উৎসব—এড়ানো খুব একটা সহজ কথা নয়। অবশ্য বেওয়ারিশ লাশ হলে অত কথা নেই, তবে তখন একটা কবর; সাড়ে তিন হাত মাটি মিলবে কিনা সন্দেহ!
স্বেচ্ছামৃত্যু পাপ বলে সমাজ মানে—সে ভাবনা নেই আমার। মন শুধু বলে, দেখ মাইরি! এত প্যারা মাথায় নিয়ে মরা যায় না। তারচে বরং ঘুমিয়ে পড়ি এইসব কানাগলি অন্ধকারে…
অবশ্য ঘুমের আগে স্বমেহন ভীষণ জরুরি এখন।
বিবশ বীর্যের সাথে হোক না পতন; যাপন নামক কিম্ভুত আচারের যাবতীয় অন্ধকারের!
আচ্ছা, ওই পতন সময়টা গত ও আগতের অমীমাংসিত তর্ক এড়িয়ে সাড়া দেবে আমাকে? লাবনীতার গাওয়া গ্লুমি সানডে গানটা কী বাজবে স্টেরিওতে, অব্যক্ত কথা, কবিতা হয়ে! যার সুরে নিজেকে আবিষ্কার করব নতুন করে, নিজস্ব নগ্নতায়…
বহুদিন পর তানিমের কবিতা পড়লাম।