বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার লোন চেয়েছে এটা আমরা সবাই জানি এবং গত ৩০ শে জানুয়ারি সেই লোন আইএমএফ এর বোর্ডে পাস হয়েছে। কিন্তু সেই লোনের শর্তগুলো কি?
শর্ত ১- ট্যাক্স জিডিপি বৃদ্ধি
প্রধান শর্তগুলোর মধ্যে এক নাম্বারে বলতে হয় বাংলাদেশের যে এখন অতি নূন্যতম লেভেলের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও আছে (৮% এর মত) সেটিকে এ বছরের মধ্যে ০.৫% বাড়াতে হবে। ২০২৪ ও ২০২৫ অর্থবছরেও এটি ০.৫% হারে এবং ২০২৬ অর্থবছরে এটিকে ০.৭% হারে বৃদ্ধি করতে হবে যাতে সামাজিক খাতে এবং সরকারি খাতে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করা যায়।
শর্ত ২- জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণি ফর্মূলা
এরপর আরেকটি প্রধান শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশের যে জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়, তার দাম নিয়মিতভাবে সমন্বয়ের জন্য একটি ফর্মুলা বানাতে হবে। কিছুদিন আগে পর্যন্তও বাংলাদেশে তেলের দাম বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন নির্ধারণ করত। অতি সম্প্রতি দেশের জাতীয় সংসদে এই আইন সংশোধিত হয়ে সরকার নির্বাহী আদেশে তেল এবং বিদ্যুৎ এর দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছে। আর জ্বালানী তেলের দামের সমন্বয় ফর্মুলা করতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে। এই ফর্মুলার মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে শুন্য করে ফেলাই লক্ষ্য। এজন্য সরকার জানুয়ারী মাসে যে ২ বার নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সেটিকে আইএমএফ স্বাগত জানিয়েছে।
শর্ত ৩ – ফরেক্স রিজার্ভ এর থাকবে IMF গাইডলাইন ও রিপোর্ট, ডলারের দাম হবে মার্কেট অনুযায়ী
এরপরের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে বাংলাদেশে যে ফরেক্স রিজার্ভ আছে সেটিকে আইএমএফের গাইডলাইন অনুযায়ী ঘোষণা করতে হবে এবং সেইভাবে রিপোর্ট প্রস্তুত করতে হবে। এছাড়াও ডলারের রেট এখন যেরকম ৪টি আছে তার বদলে মার্কেটের উপরে ছেড়ে দিতে হবে। এবং এটিও করতে হবে ২০২৩ এর জুন মাসের মাঝে। তাছাড়া আরেকটি যে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে এই বছরের ডিসেম্বরে ফরেক্স রিজার্ভ ২৬.৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামা যাবেনা।
শর্ত ৪- খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো
বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নানা রকমের দুর্নীতি এবং বিধানগত দুর্বলতার কারণে ঋণখেলাপির হার বেড়েই চলেছে। এই মন্দ ঋণের বিষয়েও শর্ত জুড়ে দিয়েছে আইএমএফ। সরকারি ব্যাংকগুলোকে মন্দ ঋনের পরিমাণ দশ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে হবে বেসরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এটি হতে হবে ৫ শতাংশের নিচে। এছাড়াও যেসকল ঋণ দুরবস্থার মাঝে আছে সেগুলোকে আলাদাভাবে একটি রিপোর্টের মাধ্যমে দেখাতে হবে এই জুন মাসের মাঝে।
শর্ত ৫- বাজার ভিত্তিক সুদের হার, আরো কমবে সঞ্চয়পত্রের সুদ
এছাড়াও সুদহারকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া, ব্যাংক কোম্পানি আইন (সংশোধিত) ২০২০, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ২০২০ সেপ্টেম্বরের মাঝে পাস করার বিষয়েও তাগাদা দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন রকমের সরকারি পরিসংখ্যানগত তথ্য দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা বছরে একবার জিডিপি এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার প্রকাশ করে।আগামী ডিসেম্বরের মাঝে তাদেরকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে জিডিপি প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে যার সুদহার এখন প্রায় ১১% এর মত। আগামী ডিসেম্বরের মাঝে সঞ্চয়পত্রভিত্তিক ঋণ মোট দেশজ ঋণের এক-চতুর্থাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশনা আছে আইএমএফের শর্তাবলির মাঝে।
শর্ত ৬- নীতিনির্ধারণি সংস্কার
নীতি বিষয়ক সংস্কারের জন্য Resilience and Sustainability Facility এর অধীনে আইএমএফ ১১টি প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধান প্রস্তাবগুলোর মাঝে যা আছে তা হলঃ জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি বিষয়ক অর্থায়ন নীতিমালা বানানো, পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ) নীতিমালা আপডেট করা, জলবায়ু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, গ্রীন বন্ড ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা বানানো। আর এসবই করতে হবে ২০২৫ এর মাঝে।