অসভ্য রহস্য

মামুন

(প্রথম ভাগ)

ধপ করে ঘুম ভেঙে গেলো। ধপ শব্দটা ব্যবহার করার কারণ হলো আমার ঘুম কখনো ধপ করে ভাঙে না।  আমি নিতান্তই একজন ঘুমকাতুরে মানুষ। মোবাইল এর অ্যালার্ম চেঞ্জ করতে হয় কমপক্ষে তিন থেকে চার বার। তারপর চা খাওয়া সহ রয়েছে নানাবিধ কার্যক্রম। চা খাওয়ার পরও আমি যদি আবার ঘুমিয়ে পড়ি তাহলে বুঝতে হবে আমি এখনো ঘুম থেকে উঠিনি। ধপ করে ঘুম ভাঙার রহস্য উন্মোচিত হলো এতক্ষনে। বাইরে পটকা ফোটানো হচ্ছে। হয়তো কারো বিয়ে। বিয়ে হলে অবশ্য গান বাজনা হতো।  কিন্তু কোনো গানবাজনা হচ্ছেনা। তারমানে অন্য কিছু। আগে একটা সময়  পটকা বা বাজি ফোটানো হতো শুধুমাত্র শবেবরাত এর রাতে। আর এখন ঢাকা শহরে কোনো কারণ ছাড়াই পটকা ফোটে। লাল, নীল,বেগুনি সহ রঙ বেরঙের  পটকা। আমি ঘড়ি দেখলাম।  ১টা ১১ বাজে। আজকে আমার বৌ বাড়িতে নেই। বাপের বাড়ি বেড়াতে গেছে।  সপ্তাহ থাকবে। বৌ এর বাপের বাড়ি দূরে হওয়ার এই একটা সুবিধা। যখন বাপের বাড়ি যায় তখন তিন থেকে চার দিন নিশ্চিন্ত থাকা যায়, যে সে হুট্ করে চলে আসবে না। বাসায় কয়েকদিনের জন্য একটা ব্যাচেলর ব্যাচেলর ভাব তৈরী হয়। মাঝে মাঝে বন্ধুদের invite করি। একটা ছোটোখাটো ব্যাচেলর পার্টির মতো হয়। অবশ্য এই ধরণের পার্টি এখন আর তেমন টা জমে না। যার অন্যতম একটি কারণ, তিন বছরের মতো হলো আমি Cigarette  ছেড়ে দিয়েছি। এখন Cigarette এর গন্ধও সহ্য করতে পারিনা। খুব আয়োজন করে বন্ধুদের নিয়ে একটা রাত ব্যাপী পার্টির ব্যবস্থা করা হলেও আমি ঘন্টা খানিকের মধ্যে মিইয়ে যাই। মনে হয় কি দরকার ছিলো খামাখা। এর থেকে ঘুমালেই বোধহয় ভালো হতো।

আমি আবার ঘড়ি দেখলাম। টা ১৪ বাজে। আমি ঘুমে মন দিলাম। এখন আর পটকার শব্দ শোনা যাচ্ছে না। ওই একটা বা দুইটা পটকাই হয়তো ফুটেছিলো। বুঝেছি, হয়তো কোনো অনুষ্ঠানের জন্য কেনা হয়েছিল। টা বা টা থেকে গিয়েছিলো। কোনো এক বদমাইশ এই রাত টার সময় বলদামি টা করলো আরকি। আমি আবার ঘড়ি দেখলাম। টা ১৭ বাজে। আমি তৃতীয়বারের মতো ঘুমে মন দিলাম  এবং একটু পরেই বুঝলাম, আমার ঘুম আসছে না। সেই সাথে আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে। পিন পিন টাইপ ব্যথা। মাথা ব্যথার যে কয়েকটা ধরণ আছে এর মধ্যে সবচাইতে বদ হলো এই পিন পিন টাইপ ব্যথা। এই ব্যথাটা সারাদিন ব্যাপি স্থায়ী হয়। কোনো ঔষধে এই ব্যাথা যায় না। এই ব্যথা দূর করার উপায় একটাই। রঙ চা। তবে যেন তেন রঙ চা নয়। লবঙ্গ, আদা, লেবুর রস,এবং পুদিনাপাতা হলো এই বিশেষ চা এর প্রধান চারটি উপাদান। এর কোনো একটা বাদ গেলে এই চা সম্পূর্ণরূপে তার কার্যকারিতা হারাবে। আমি বিছানা থেকে উঠলাম। এই বিশেষ চা না খেলে মাথা ব্যথা কমানো যাবে না এবং এই ব্যথা নিয়ে ঘুমও আসবেনা। যেহেতু শারমিন (আমার বৌ) বাসায় নেই সকালে একটু আগেই উঠতে হবে। তাছাড়া অফিসে দেরি করে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি কিচেন এর দিকে গেলাম। আশ্চর্য হলেও সত্য আমি এই বিশেষ চা তৈরির প্রধান চারটি উপাদানই পেয়ে গেলাম শুধু চা টা পেলাম না। চা এর কৌটা কোথায় রেখেছে তা জানার জন্য এতো রাতে শারমিন কে ফোন দেওয়া ঠিক হবে না। নিরুপায় আমি চা ছাড়াই পানিতে লবঙ্গ,আদা, লেবু এবং পুঁদিনা পাতা দিয়ে চা এর মতো বানালাম। চিনি খুঁজতে যেয়ে দেখি টেস্টিং সল্ট এর কৌটা। আমি চিনিও দিলাম সাথে টেস্টিং সল্টও। পাশে একটা কৌটায় দেখলাম হলুদের গুঁড়া। কি মনে করে এক চামচ হলুদের গুঁড়াও দিলাম চা এর বিকল্প হিসাবে। পানির রঙ টা কিঞ্চিৎ হলুদ হয়ে গেলো। আমি কি মনে করে আরো দুই চামচ ঢেলে দিলাম। বাহ্ একটা সুন্দর রঙ আসছে। দানে দানে তিন দান। আমি আরো দুই চামচ গুঁড়া হলুদ ঢেলে দিলাম। এতক্ষনে মনে পড়লো ঘরে কফি থাকার কথা, কফিই তো দিতে পারতাম। আমি নিজের মধ্যে আফসোস রাখলাম না, দুই চামচ কফিও দিলাম। পরে আরো চার চামচ। মাশাল্লাহ, সুন্দর একটা কালার আসছে এবং একটা মন মাতানো ঘ্রাণও। এক মগ চা হলো। আমি চায়ে চুমুক দিলাম এবং প্রথম চুমুকেই আমি বিমোহিত। এটা কিভাবে সম্ভব? এটা তো চা হয়নি। এটা অমৃত। কেমন নেশা নেশা একটা ভাব। 

আমি টের পেলাম আমার শিরদাঁড়াটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আমি অর্ধেক শেষ করে ফেললাম। নাহ! এতো দ্রুত শেষ করা যাবে না। এই ধরণের তরল পানীয় পান করতে হয় ধীরে ধীরে। এক চুমুক মুখে দিয়েই গিলে ফেলতে হয়না কিছুক্ষন মুখের মধ্যে রেখে দিতে হয়।  আমি তাই করলাম। ঘড়ি দেখলাম ১ টা ৫১ বাজে। আমার মধ্যে এক ধরণের অন্যরকম অনূভুতি কাজ করছে। এমনিতেই চারিদিকে শুনশান নিরবতা। রাস্তায় শুধু রাস্তার আলো। অনেক দিন গান শোনা হয়না। হঠাৎ শুনতে ইচ্ছা করছে। Hotel California, মাইকেল জর্জ এর এই গান টা শোনা যেতে পারে। আমার খুব প্রিয় একটা গান। আমি youtube এ গান টি প্লে করলাম। আমি বারো বছর আগে ফিরে গেলাম। এক হাতে Cigaratte, পুরো ঘর Cigaratte এর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, টেবিলে কফির মগ, আরেক হাতে প্রেমিকার প্রতারণার Evidance আর ওপাশে Scorpions এর Always Somewhere গান টি বেজে যাচ্ছে-

I call your number the line ain’t free
I like to tell you come to me
A night without you seems like a lost dream
Love I can’t tell you how I feel

Always somewhere
Miss you where I’ve been
I’ll be back to love you again

Another morning another place
The only day off is far away
But every city has seen me in the end
And brings me to you again

আমার বিশেষ চা একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এর স্বাদ আরো বেড়ে গেছে। আমি আমার জীবদ্দশায় এর আগে এমন স্বাদ এর কিছু খাইনি কখনো। এই স্বাদ টি ধরে রাখা দরকার। স্বাদ ধরে রাখতে হলে সময় ধরতে হয়। আর কোনো একটি বিশেষ সময় ধরে রাখতে চাইলে ওই সময়ে কিছু একটা লিখে ফেলতে হয়। লেখাটি কবিতা হলে ভালো হয়, কারণ  কবিতা এক ধরণের কোডিং হিসাবে কাজ করে। অর্থাৎ সময় টা সবাই দেখতে পাবে কিন্তু আমি ছাড়া কেউ হাত দিয়ে ধরতে পারবে না এবং পড়তেও পারবে না ।

আমি কবিতা লেখার উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক দিন পর কাগজ কলম নিয়ে বসলাম। মাথায় এখন আর পিন পিন ব্যথাটা নেই। তবে অন্য এক ধরণের একটা ঝিম ঝিম ভাব তৈরী হয়েছে। বুঝিয়ে বলতে না পারার মতো একটা অনুভূতি। যে অনুভূতিতে কেমন যেন একটা গোপনীয় আনন্দ আছে। 

কোনো কবিতার লাইন মাথায় আসছে না এখন। একটা গল্প লেখা যেতে পারে। কি গল্প লিখবো? দুঃখের না আনন্দের? নাকি ভয়ের? কেন যেন আমি চিন্তাও করতে পারছিনা। এদিকে মাথার মধ্যে গোপনীয় আনন্দ বেড়েই যাচ্ছে। একটা কাজ করা যেতে পারে একটা গোপনীয় টাইপ গল্প লিখলে মন্দ হয়না। দবির চাচা কে নিয়ে একটা গল্প লেখা যায়। নাহ, দবির চাচা ভালো মানুষ। তাকে নিয়ে বাজে গল্প লেখা যাবে না। বরং ময়না কে নিয়ে লেখি। ওকে নিয়ে একটা বাজে গল্প লিখলে দোষের কিছু হওয়ার কথা না। ময়না আমাদের এলাকার একটা ছেলে। বয়স চব্বিশ বা পঁচিশ এর বেশি হবে না। দুনিয়ার বখাটে বা বদমায়েশ টাইপ। 

ময়না একটা গাড়ির গ্যারাজে কাজ করে। দশ বছর বয়সে গ্যারাজটিতে ও হেলপার হিসাবে ঢুকেছিলো এখন বলতে গেলে সেই সব। দূর থেকে ইঞ্জিন এর আওয়াজ শুনেই ও বলে দিতে পারে কি গাড়ি, ইঞ্জিন এ কি কি সমস্যা আছে, ইঞ্জিন এর বয়স সহ আরো অনেক কিছু। আমার বাইক থাকার সুবাদে ময়নার সাথে আমার পরিচয়। গ্যারাজে গেলেই বলে, ওস্তাদ একটা চা এনে দেই? আমি বলি, আন। তারপর টাকার জন্য হাত পাতে। আমি কিছু বলি না। আমি টাকা দিয়ে দেই। দশ মিনিট পর ও একটা Benson Cigaratte আর এক কাপ চা আমার হাতে তুলে দেয়। আমার কাছ থেকে যে টাকা নেয় তাতে আরো একটা Benson Cigaratte হয়। ওই টাকাটা আর ফেরত দেয় না। কিন্তু ময়না তার পেশায় Honest. তার হাতে শো-রুম থেকে কেবল নামানো Brand New গাড়ি টাও নির্দ্বিধায় তুলে দেওয়া যায়। গাড়ি তার পেশা গাড়িই তার নেশা। আমি জানি এই নেশা ছাড়াও তার আরো একটি নেশা আছে। একটা গোপনীয় বাজে  নেশা। মেয়ে পটানোর নেশা। মেয়ে পটানো পর্যন্ত তার এই নেশাটি থেমে থাকলে ভালো হতো কিন্তু তা হয়না তা এগিয়ে যায় বহুদূর, কল্পনার বাইরে। কেউই তা জানতে পারে না। কিন্তু আমি জানি। কিভাবে জানি বা কেন জানি তা অন্য কোনোদিন অন্য কোনো এক গল্পে  না হয় বলা যাবে। ময়না কিভাবে কিভাবে যেন স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের পটিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে ভালো ঘরের মেয়েদেরও পটিয়ে ফেলে। সহজেই অনুমান করা যায় মেয়ে পটানোর ক্ষেত্রে তার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে বাইক আর আকর্ষণীয় বচনভঙ্গি এবং সেই সাথে পরিপাটি পোশাক আশাক। ও যখন শিকারে বের হয় তখন বোঝা যাবেনা ওর চৌদ্দ গুষ্টির কেউ গ্যারাজে কাজ করে। উঠতি বয়স এর মেয়েদের বাগে আনার জন্য যা যা দরকার তার সবগুলোই ওর আছে। ও Girls School এর পাশে ফ্লেক্সিলোড এর দোকান থেকে মেয়েদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে। ফোন করে। দশটায় একটা লেগে যায়। কিছুদিন ফোনে কথা হয়। তারপর একদিন দেখা। ফুড কোর্টে  কিছুদিন খাওয়া দাওয়া। তারপর বিভিন্ন পার্কে কিছুদিন ঘুরাঘুরি। সবশেষে কোনো রিসোর্ট অথবা সস্তা টাইপ কোনো হোটেল। তারপর শেষ। সবকিছু শেষ। বলছি ওই স্কুল পড়ুয়া মেয়েটির কথা। ময়নার কথা না। ততদিনে ময়নার নতুন গল্প শুরু হয়ে গেছে। দ্বাদশ শ্র্রেণীতে পড়ুয়া একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে। মেয়েটির নাম ফ্লোরা। রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ। 

গ্যারাজের মালিক বহুবার ময়নাকে বের করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু মালিক জানে, ময়নাকে বের করে দিলে গ্যারাজের ব্যবসা শেষ। ময়না এখন সপ্তাহে দুইদিন, কোনো সপ্তাহে তিনদিন কাজে আসেনা। কিন্তু তারপরও মালিক তাকে বাদ দিতে চায়না। কাস্টমারদের সাথে এতো ভালো সম্পর্ক আর কেউ রাখতে পারেনা। 

মাথার ঝিম ঝিম ভাবটা চলে গেছে। ব্যথাতো একদমই নেই। কিন্তু নতুন একটা ব্যাপার আমি খেয়াল করলাম। মনে হচ্ছে আমি ঘরে এক না। আরো কেউ আছে। একটা মেয়ে মানুষ। হাটাহাটি করছে, কখনো আবার আমার পাশে এসে বসছে, আমাকে কি কি যেন বলছে কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা। আমি ঘড়ি দেখলাম। ২ টা ৩৮ বাজে। এই রাতে আমার ঘরে কারো থাকার কথা না। শারমিন কে আমি গতকাল বিকালে গাড়িতে তুলে দিয়েছি। আমার মধ্যে কি হালুসিনেশন কাজ করছে তাহলে? আমার মগে এখনো কিছুটা সেই বিশেষ পানীয় রয়েছে। যার সাধ আস্তে আস্তে আরো বাড়ছে। এই তরলই কি আমার মধ্যে হালুসিনেশন তৈরী করছে? সেটা হওয়ার কথা না। বেশি করে হলুদের গুঁড়া দিয়েছি। অবশ্য এখন বাজারে যে হলুদের গুঁড়া পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমানে Lead chromate বা সীসা আর ক্রোমিয়াম এর মিশ্রণ মেশানো হয়  হলুদ এর রঙ বাড়ানোর জন্য যা পরবর্তীতে নিউরোটক্সিসিন হিসাবে কাজ করে। আর শরীরে যখন নিউরোটক্সিসিটি ঘটে তখন এটি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের অন্যান্য অংশ কে পুরোপুরি অকার্যকর করে দিতে পারে। আমি আবার এর সাথে মিশিয়েছি কফি। কফি তে আছে ক্যাফেইন। মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে LDL cholesterol বৃদ্ধি করে। এখন মনে হচ্ছে , something is very wrong. আমার তো এতো কিছু জানার কথা না? সারাজীবন scince থেকে দূরে থেকেছি। আমি এখন মেয়েটিকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।  

ময়না আর ফ্লোরা বসে আছে শহরের বাইরে একটা শিশু পার্কে। পার্কটির অলিগলি ময়নার সব মুখস্ত। পার্কে রয়েছে অনেক গোপনীয় জায়গা। কিছু টাকা খরচ করলেই এরকম জায়গা পাওয়া যায়। ময়নার সাথে ফ্লোরার পরিচয় আজকে সাতাশ তম দিনে গড়িয়েছে। ফ্লোরা ময়নার গা ঘেঁষে বসে আছে। ময়নার হাতে Cigarrate. Cigarrate এর ধোঁয়া টানছে আর তা ফ্লোরার মুখের উপর ছাড়ছে। ফ্লোরা তাতেও মজা পাচ্ছে। ময়না এবার ফ্লোরাকে জড়িয়ে ধরলো এক হাতে। ময়নার জীবনে এইটাই সবচাইতে সহজ শিকার। একেতো মা মরা মেয়ে তারপর আবার বাবা থেকেও এক প্রকার না থাকার মতো। ফ্লোরার বাবা একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ছোট পদে চাকরি করেন। রাত দশটার আগে কখনোই বাসায় ফিরতে পারেন না। আবার ভোরে বেরিয়ে যেতে হয়। মার্কেটিং এর কাজ। ফ্লোরার মা মারা গেছেন আরো সাত বছর আগে। ফ্লোরাকে ময়না এতো সহজে বাগে আনতে  পারবে তা সে কল্পনাও করতে পারেনি। চার-পাঁচ দিন ফোনে কথা বলেই ফ্লোরাকে টোপ গিলিয়েছে। বাইরে এসেছে আজকে তৃতীয় দিন।

ময়না মনে মনে অবাক হয় এতো বোকা মেয়ে এখনো আছে এই মডার্ন যুগে? ময়না ফ্লোরাকে বলে, তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো? দুইদিন মিশে এতটা বিশ্বাস করে ফেলেছো আমাকে? ফ্লোরা বোরখা পরা। নেকাবের ভেতর থেকেই হেসে দেয়। মায়া জড়ানো কণ্ঠে বলে, “বিশ্বাসের সাথে সময়ের কোনো সম্পর্ক নেই, এটা মূলত আবেগের সাথে মস্তিষ্কের ভুল বুঝাবুঝি”। ময়না কিছুটা বিস্মিত হয়। ফ্লোরাতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে পারে। “”ফ্লোরা কথা চালিয়ে যায়। মানুষ সব সময় বিশ্বাসী হয়ে বিশ্বাস করে না, তাকে অবিশ্বাসী হয়েই কোন কিছুকে বিশ্বাস করতে হয়।” তুমি আগে তো এতো সুন্দর করে কখনো কথা বলোনি, এতো কঠিন কঠিন কথা? ময়না বলেই ফেলে। ” তুমি তাহলে খেয়াল করে আমার কথা শোনেন নি কখনো, হয়তো তোমার খেয়াল ছিল অন্য দিকে”। উত্তরে ময়না বলে,   “নাহ, এমনটা হওয়ার কথা না, আমি মন দিয়েই তোমার কথা শুনেছি।” ময়না ফ্লোরাকে আরো কাছে টেনে নেয়। ফ্লোরার মধ্যে আড়ষ্টতা নেই একদম। পাশে কোথায় চেঁচামেচি হচ্ছে। হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। প্রায়ই এখানে এধরণের সমস্যা হয়। তবে ময়নার হয়না। ওকে সবাই চেনে। কেউ ওর সাথে ঝামেলা করে না। থানা থেকে শুরু করে সব জায়গায় টাকা দেওয়া আছে ময়নার। 

এই পার্কে ময়নার যাওয়া-আসা চার-পাঁচ বছরেরও বেশি। ময়নার জন্য নিরাপদ একটা ঘরও ঠিক করা থাকে। আজকেও ফ্লোরাকে নিয়ে ওখানেই এসেছে। ময়না হঠাৎ বলে উঠলো, কি ব্যাপার তুমি এখনো নেকাব খুলছোনা, বোরকাও কি পরে থাকবে এতক্ষন? নাকি এখনো লজ্জা পাচ্ছ? বলেই ময়না Benson এর প্যাকেট থেকে আরেকটি Cigaratte বের করলো। ফ্লোরা উত্তরে বলে, কেন বোরকা না খুলে প্রেম করা যায়না? কেন যায় না, অবশ্যই যায়। তবে অন্তত নেকাব টা খুলো। আমার পরীটাকে অন্তত একবার সামনে থেকে দেখি। তুমি আগের দিনেও একটু সময়ের জন্য নেকাব টা খুলেছিলে। আমি ঠিকমতো দেখতেই পাইনি তোমাকে। শুধু মোবাইলেই না যতটুকু দেখেছি তোমাকে? ফ্লোরা মুখে দুষ্টুমির হাসি নিয়ে বলে, আমি নেকাব খুলবো না। আমাকে দেখলে তুমি ভয় পেতে পারো। আমি দেখতে ভুতের মতো। ভুত না Sorry পেত্নীর মতো। আগের দিন তো স্পেশাল করে মেকআপ করা ছিল, ওই অন্ধকার Restaurant- এ বসে তুমি তা ধরতে পারোনি। ময়না পাল্টা কথা বলে,ঠিক আছে আমি আমার পেত্নীর মুখটাই দেখি,নেকাব টা খুলো। আজকে ঘরে আলোর অভাব নেই, দেখিতো আমার রানী কোন রাজপুত্রের ঘরে আটকানো পেত্নী। তাকে আমি আজকেই উদ্ধার করবো। ফ্লোরা বললো, আমরা বাসায় যাবোনা? আর কতক্ষন থাকবো এখানে? ময়না পেছন থেকে ফ্লোরাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। বলে, এইতো কিছুক্ষন পরেই আমরা বের হবো। ফ্লোরা সেই আগের মতো করেই কিছুটা দুষ্টুমির সুরে বলে ওঠে, তোমার এই কিছুক্ষন আর কতক্ষন? ময়না বলে এতো তাড়া কিসের তোমার? ময়না আরো জোরালো ভাবে ফ্লোরাকে জড়িয়ে ধরতে চায়। ফ্লোরা বাঁধা দেয়না। ফ্লোরা বুঝতে পারে, ময়না উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে, মানসিক এবং শারীরিক দুই দিক থেকেই। 

ময়না দুই হাত দিয়েই পেছন থেকে ফ্লোরাকে জড়িয়ে ধরে। এক হাত দিয়ে ফ্লোরার নেকাব খুলে ফেলে। ঠিক একই সময়ে ফ্লোরা তার ডান হাত বোরকার ভেতরে পরে থাকা জিন্স এর ঠিক কোমর বরাবর সেটে থাকা জাপান এর AUS -8 স্টিল দিয়ে তৈরী করা সাত ইঞ্চি লম্বা ছুরিটির খসখসে নাইলনের হাতলের ওপর রাখে। ছুরিটি সংগ্রহ করতে তার খরচ হয়েছে একত্রিশ হাজার টাকা আর সময় লেগেছে এক বছর। ময়না আরো শক্ত করে ফ্লোরাকে চেপে ধরে। ফ্লোরা মুখ ঘোরায় ময়নার দিকে। লাইট এর আলো সরাসরি ফ্লোরার মুখের ওপর পড়ে। ময়না দেখে ফ্লোরাকে। মিষ্টি একটা চেহারা। কঠিন কিন্তু মায়াবী। এই ধরণের চেহারার বর্ণনা পাওয়া যায় রুপ কথার গল্পের বই গুলোতে। রাজকন্যা। সাত সাগর আর তেরো নদী পার হয়ে কোনো এক রাজপুত্র আসছে তাকে নিয়ে যেতে। এমনই চেহারা। 

হঠাৎ করেই কেন যেন ময়নার শিরদাঁড়াটা ঠান্ডা হয়ে যায়। কোনো এক অচেনা ভয় ময়নার গলা চেপে ধরে। ময়না নিশ্বাস নিতে পারে না। ময়না বুঝতে পারে, ও যাকে জড়িয়ে ধরে আছে সে ফ্লোরা নয় সে আয়েশা।  আয়েশার  গলার নিচে লম্বা ক্ষত চিহ্ন এর একটা দাগও এখন স্পষ্ট দেখা যায়। বছর দুএক আগে ময়নারা সাত জন মিলে আয়শাকে ধর্ষণ করেছিল। তারপর ধর্ষণ শেষে গলা কেটে হত্যা করে আয়শা কে ফেলে দিয়েছিলো শহরের কোনো এক অন্ধকার রাস্তায়। টানা দুই মাস লেখালেখি হয়েছিল, মামলা হয়েছিল অজ্ঞাতনামা আসামিদের নামে। কিন্তু কিছুই হয়নি। ময়না সমস্ত শরীর ঢিল করে দেয় সেই অজানা ভয়ে কিন্তু আয়শা সামনা-সামনি ময়না কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। ময়না কোনো কিছু চিন্তা করার আগেই তার ঠিক তলপেট বরাবর আয়শা SOG SEAL Team Elite ছুরি দিয়ে একটা পোঁচ মারে। আয়শা ময়না কে চিৎকার করার সুযোগ দেয় না, আগে থেকে দলা পাকিয়ে রাখা নেকাব টি ময়নার মুখের মধ্যে ভোরে দেয়। ময়না বিড় বিড় করে কি যেন বলার চেষ্টা করছে। অস্পষ্টভাবে যা বোঝা যায় তা ঠিকমতো বুঝে উঠার আগেই আয়শা আরো ছত্রিশ টা পোঁচ মারে। আয়শা বোরকা খুলে ফেলে। পরনের টিশার্ট টি ও চেঞ্জ করে। আয়শার হ্যান্ড ব্যাগে আগে থেকেই এক্সট্রা টিশার্ট ছিল। বিকাল তখন গড়ায়নি। সন্ধ্যা নামার আগেই  আয়শা ঘর থেকে বের হয়ে যায়।  

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Reviews

Popular Articles